পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৪৯

উঁহাকে সঙ্গে নিলে আপনারও যুদ্ধে জিতিয়া আসা নিশ্চিত৷”

 উত্তরাকে অর্জুন নিজের কন্যার মতো স্নেহ করিতেন, তাঁহার আব্দার তিনি কিছুতেই না রাখিয়া পারিতেন না। উত্তরের কথায় রাজকুমারী যখন অর্জুনের নিকট আসিয়া, মধুর স্নেহ আর আদরের সহিত, তাঁহাকে সারথি হইবার জন্য অনুরোধ করিলেন তখন আর তাঁহার “না” বলিবার উপায় রহিল না। আর তাঁহার না বলিবার ইচ্ছাও ছিল না। সুতরাং তিনি উত্তরার সঙ্গে সঙ্গেই রাজপুত্রের নিকট চলিলেন। উত্তর তাঁহাকে বলিলেন, “বৃহন্নলা! আমি কৌরবদের হাত হইতে গোরু ছাড়াইয়া আনিতে যাইব। তুমি আমার সারথি হইবে?”

 অর্জুন বলিলেন, “আমি গাইয়ে বাজিয়ে মানুষ, সারথি-ফারথি হওয়া কি আমার কাজ? নাচিতে বলিলে বরং চেষ্টা করিতে পারি৷”

 উত্তরা বলিলেন, “আগে তো সারথির কাজটা চালাইয়া দাও, শেষে নাচিবে এখন৷”

 এইরূপে হাসি তামাশার ভিতরে অর্জুন সারথির সাজ পরিতে লাগিলেন৷

 ভঙ্গির আর সীমা নাই। যেন কতই আনাড়ি, জম্মেও যেন বর্ম চোখে দেখেন নাই, সেটাকে উল্টা করিয়া পরিয়াই বসিলেন। মেয়েরা তো তাহা দেখিয়া হাসিয়া কুটিপাটি৷

 যাহা হউক, শেষে সাজগোজ করিয়া দুজনই রওয়ানা হইলেন। যাইবার সময় উত্তরা বলিলেন “ভীষ্ম দ্রোণ, এদের পোশাকগুলি কিন্তু আনা চাই আমরা পুতুল সাজাইব৷”

 তাহাতে অর্জুন হাসিয়া বলিলেন, “তোমার দাদা যদি উঁহাদিগকে পরাজয় করিতে পারেন, তবে আনিব৷”

 এইরূপে তাঁহারা যাত্রা করিলেন। উত্তরের উৎসাহ আর ধরে না, তিনি ক্রমাগতই বলিতেছে, “কোথায় গেল কৌরবেরা? বৃহন্নলা, শীঘ্র চল! এখনই গোরু ছড়াইয়া আনিব!”

 অর্জুন রথ চালাইতে কিছুমাত্র ত্রুটি করিলেন না। খানিক পরেই তাঁহারা সেই শ্মশানে আর শমী গাছের নিকট আসিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখান হইতে কৌরবদের সৈন্য দেখা যাইতেছিল, যেন সাগরের জল, পৃথিবী ছাইয়া ফেলিয়াছে!

 সেই সৈন্যের দল দেখিযাই ভয়ে উত্তরের মুখ শুকাইয়া গেল। তিনি বলিলেন, “ও বৃহন্নলা! আমাকে এ কোথায় আনিলে? আমি ছেলেমানুষ, এত এত সৈন্য আর ভয়ানক বীরের সহিত কেমন করিয়া যুদ্ধ করিব? ওমা! আমার কি হইবে? আমাকে ঘরে নিয়া চল!”

 অর্জুন বলিলেন, “সে কি রাজপুত্র! এত বড়াই করিয়াছিলেন, সেসব এখন কোথায়? এখন খালি হাতে ফিরিলে লোকে বলিবে কি? আমি তো গোৰু না লইয়া ঘরে ফিরিতে পারিব না৷”

 উত্তর বলিলেন, “গোরু যায়, সেও ভালো! গালি খাই, সেও ভালো! আমি যুদ্ধ করিতে পারিব না৷”

 এই বলিয়া রজপুত্র রথ হইতে লাফাইয়া পড়িয়া দে ছুট!

 কি বিপদ! বুঝি বেচারা সবই মাটি করে। কাজেই অর্জুনকেও তাঁহার পিছু পিছু ছুটিতে হইল। ছুটতে ছুটতে তাঁহার মাথার লম্বা বেণী এলাইয়া গেল, গায়ের চাদর হওয়ায় উড়িতে লাগিল৷

 এদিকে কৌরবের লোকেরা এসকল ঘটনার অর্থ কিছুই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেনা। উত্তরকে পালাইতে আর অজুৰ্নকে ছুটিতে দেখিয়া, প্রথমে কেহ কেহ হাসিয়াছিল। কিন্তুউপেন্দ্র—৩২