পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৫৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৫৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই সংবাদ শুনিয়া বিরাটের কি আনন্দ হইল! তিনি দূতগণকে পুরস্কার দিয়া, তখনই নগরে একটা ভারি ধুমধামের ব্যবস্থা করিলেন।

 তারপর সৈরিন্ধীকে ডাকিয়া বলিলেন, “পাশা আন, আমি কঙ্কের সহিত পাশা খেলিব।” পাশা আসিল, খেলা আরম্ভ হইল। রাজার মন আজ আনন্দে অধীর হইয়া উঠিয়াছে। তিনি পাশা খেলিতে খেলিতে বলিলেন, “কঙ্ক আজ আমার পুত্র কৌরবদিগকে হারাইয়া দিয়াছে!”

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “মহারাজ! বৃহন্নলা সারথি, হারাইবেন না তো কি?”

 এ কথায় রাজা তো একেবারে চটিয়া লাল! ‘কি? আমার পুত্র কি উহাদিগকে হারাইতে পারে না, তুমি যে বারবার কেবল বৃহন্নলা বৃহন্নলা করিতেছ? খবরদার! প্রাণের মায়া থাকে ততা আর এমন বেয়াদবি করিও না!'

 যুধিষ্ঠির বলিলেন, “ভীষ্ম, দ্রোণ, কর্ণ, এ-সকল বীরকে কি বৃহন্নলা ছাড়া আর কেহ হারাইতে পারে?”

 ইহার পর রাজা আর রাগ থামাইতে না পারিয়া, যুধিষ্ঠিরের মুখে পাশা ছুঁডিয়া মারিলেন। পাশার ঘায় যুধিষ্ঠিরের নাক দিয়া দর দর ধারে রক্ত পড়িয়া তাঁহার অঞ্জলি ভরিয়া গেল। দ্রৌপদী তাড়াতাড়ি সোনার গামলায় জল আনিয়া, তাঁহার শুশ্রুষা করিতে লাগিলেন।

 এই সময়ে দ্বারী আসিয়া বলিল, “রাজকুমার বৃহন্নলার সহিত দরজায় উপস্থিত হইয়াছে।” তাহা শুনিয়া রাজা বলিলেন, “শীঘ্র তাহাদিগকে এখানে লইয়া আইস।”

 যুধিষ্ঠির দেখিলেন যে সর্বনাশ উপস্থিত, অর্জুন আসিয়া তাঁহার সেই অবস্থা দেখিলে, আর বিরাটকে আস্ত রাখিবেন না। কাজেই তিনি দ্বারীর কানে কানে বলিয়া দিলেন, বৃহন্নলা যেন এখন এখানে না আসে। সুতরাং উত্তর একাই সেখানে আসিলেন।

 উত্তর যুধিষ্ঠিরের মুখে রক্ত দেখিয়াই ব্যস্তভাবে জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবা! এমন অন্যায় কাজ কে করিল? ইহাকে কে আঘাত করিল?”

 রাজা বলিলেন, “আমি করিয়াছি! আমি যতই তোমার প্রশংসা করি, ততই এ বামুন খালি বৃহন্নলার কথা বলে। কাজেই শেষে আমি উহাকে মারিয়াছি'।

 উত্তর বলিলেন, “ব্রাহ্মণ রাগিলে সর্বনাশ হইবে। শীঘ্র ইহাকে সন্তুষ্ট করুন।”

 এ কথায় রাজা যুধিষ্ঠিরের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করাতে, যুধিষ্ঠির বলিলেন, মহারাজ, আমি ইহার পূর্বেই ক্ষমা করিয়াছি।

 যুধিষ্ঠিরের রক্ত পরিষ্কার হইলে বৃহন্নলা সেখানে আসিয়া রাজাকে নমস্কার করিলেন। রাজা বৃহন্নলার সামনেই উত্ত রকে বলিতে লাগিলেন, বাবা তুমি আমার নাম রাখিয়াছ। তোমার মতন পুত্র কি আর কাহারো হয়! এতগুলি মহা মহা বীরের সহিত না জানি কেমন করিয়া যুদ্ধ করিয়াছিলে!

 উত্তর বলিলেন, “বাবা! আমায় কিছুই করিতে হয় নাই। এক দেবপুত্র আসিয়া আমার হইয়া যুদ্ধ করিয়াছিলেন, তিনিই কৌরবদিগকে তাড়াইয়া গরু ছাড়াইয়া আনিয়াছেন।”

 এ কথা শুনিয়া বিরাট বলিলেন, “তবে তো সেই দেবপুত্রর পূজা করিতে হয়। তিনি কোথায়?”

 উত্তর বলিলেন, “তিনি কাল পরশু আবার আসিবেন।”