পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৬১

হাত দিতেছি না। উনি মারা যাউন, তারপর আমি অর্জুনের সহিত যুদ্ধ করিব।”

 এইরূপে দুর্যোধনের পক্ষে ভীষ্মকে সেনাপতি করিয়া, অন্যান্য যোদ্ধারা তাহার অধীনে যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত হইলেন।

 পাণ্ডবদিগের পক্ষে দ্রুপদ, বিরাট, সাত্যকি, ধৃষ্টদ্যুম্ন, ধৃষ্টকেতু, শিখণ্ডী ও জরাসন্ধের পুত্র সহদেব, এই সাতজনকে সেনাপতি করা হইল; ধৃষ্টদ্যুম্ন হইলেন প্রধান সেনাপতি। ইহাদের আবার পরিচালক হইলেন অর্জুন।

 এই সময়ে দুর্যোধন একদিন উলুক নামক এক দূতকে বলিলেন, “তুমি পাণ্ডবদিগকে আর কৃষ্ণকে, খুব করিয়া গালি দিয়া আইস।”

 কিরূপ গালি দিতে হইবে, তাহাও দুর্যোধন অবশ্য বলিয়া দিলেন;তত কথা লিখিবার স্থান নাই। আর থাকিলেই বা তাহা লিখিয়া দরকার কি? ভালো কথা হইত তবে না হয় লিখিতাম। দুর্যোধনের হুকুম পাওয়া মাত্র উলুক পাণ্ডবদিগের নিকট গিয়া, তাহার কথাগুলি অবিকল মুখস্থ বলিয়া দিল।

 এই সকল গালির উত্তরে পাণ্ডবেরা বলিলেন, “উলুক! দুর্যোধনকে বলিবে যে তাহার উচিত সাজা পাওয়ার সময় উপস্থিত হইয়াছে, আর বেশি বিলম্ব নাই।”

 উলুক চলিয়া গেলে পাণ্ডবেরা সৈন্য ভাগ করিয়া গুছাইতে লাগিলেন। বড়বড় সেনাপতিগণ কে কোন্ কোন্ দলের কর্তা হইবেন, এ সকল ঠিক করাই সকলের প্রথম কাজ। এ কাজ শেষ হইয়া গেলে আর আয়োজনের কিছুই বাকি রহিল না; এখন শত্রু আসিলেই হয়।

 দুর্যোধনের দলেও অবশ্য এইরূপ আয়োজন চলিতেছিল। দুই পক্ষের যোদ্ধাদিগের কে কেমন বীর, ভীষ্ম দুর্যোধনকে তাহা সুন্দররূপে বুঝাইয়া দিয়া বলিলেন, “তোমার জন্য আমি পাণ্ডবদিগের সহিত যথাসাধ্য যুদ্ধ করিব। কৃষ্ণই হউন, আর অর্জুনই হউন, কাহাকেই আমি সহজে ছাড়িব না। উহাদেব মধ্যে কেবল শিখণ্ডীব গায়ে আমি অস্ত্রাঘাত করিতে প্রস্তুত নহি, আব সকলের সহিতই যুদ্ধ করিব।”

 এ কথায় দুর্যোধন আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা কবিলেন, “কেন? শিখণ্ডীর গায়ে আপনি যে অস্ত্রাঘাত করিবেন না, তাহার কারণ কি?”

 ভীষ্ম বলিলেন, “স্ত্রীলোকের গায়ে হাত তুলিতে নাই, তাই মারিব না।”

 দুর্যোধন বলিলেন, “শিখণ্ডী তত দ্রুপদের পুত্র। সে স্ত্রীলোক হইল কিরূপে?”

 ভীষ্ম বলিলেন, “শিখণ্ডীর কথা তবে বলি, শুন। আমার ভাই বিচিত্রবীর্যের সহিত বিবাহ দিবার জন্য আমি কাশীরাজার তিনটি কন্যাকে স্বয়ম্বর সভা হইতে জোর করিয়া লইয়া আসি। ইহাদের বড়টির নাম অম্বা। অম্বা বলিল, ‘আমি মনে মনে শাল্বকে বিবাহ করিয়াছি। কাজেই আমি তাহাকে ছাড়িয়া দিয়া আর দুটি মেয়ের সহিত ভাইয়ের বিবাহ দিলাম।

 ‘অম্বা শাল্বের কাছে গেল, কিন্তু আমি তাহাকে জোর করিয়া আনায় অপমান বোধ করিয়া, আর হয়তো কতকটা আমার ভয়েও, সে তাহাকে বিবাহ করিতে সম্মত হইল না। এইরূপে সেই কন্যা নিতান্ত দুঃখে পড়িয়া ভাবিল, এখন কোথায় যাই? শাল্ব অপমান করিল, পিতার ঘরে গেলেও তাহারা আমাকে ঘৃণা করিবে। হায়! ভীষ্মই আমার এই দুঃখের কারণ? উহাকে শাস্তি দিতে পারিলে তবে আমার মন শান্ত হয়। এই মনে করিয়া সে কত দেশ যে ঘুরিল, কত মুনি-ঋষির নিকট নিজের দুঃখের কথা বলিয়া কাদিল। শেষে আমার