পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

“এমনভাবে বন্ধুবান্ধবকে মরিতে দেখিয়া আমার বড়ই কষ্ট হইতেছে। কাল হইতে তোমরা আরো ভালো করিয়া যুদ্ধ কর।”

 যুধিষ্ঠিরের চিন্তা দেখিয়া সকলে মিলিয়া তাহাকে উৎসাহ দিতে লাগিলেন। ইহাতে তাহার মন অনেকটা শান্ত হওয়ায়, পরদিনের যুদ্ধের পরামর্শ আরম্ভ হইল। তখন যুধিষ্ঠির ধৃষ্টদ্যুম্নকে বলিলেন, “এবারে ‘ক্রৌঞ্চারুণ’ ব্যহ করিয়া সৈনা সাজাইবে।”

 পরদিন ‘ক্রৌঞ্চারুণ’ ব্যুহ করিয়া পাণ্ডবদিগের সৈন্য সাজান হইল। কৌরবেরাও তাদের সৈন্য দিয়া অন্যরূপ এক ব্যুহ প্রস্তুত করিলেন। সেদিনকার যুদ্ধও নিতান্তই ভয়ানক হইয়াছিল।

 সেইদিন অর্জুনের যুদ্ধে কৌরবেরা বড়ই অস্থির হইয়া উঠে। তাহা দেখিয়া দুর্যোধন ভীষ্মকে বলিলেন, “দাদামহাশয়! আপনারা থাকিতে কি অর্জুন সব সৈন্য মারিয়া শেষ করিবে? একটু ভালো করিয়া যুদ্ধ করুন।”

 তখন অর্জুন আর ভীষ্মে এমনি ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল যে, তেমন যুদ্ধ আর হয় নাই। সে যুদ্ধ দেখিয়া অন্য সকলের উৎসাহ বাড়িয়া যাওয়াতে, তাহারা পাগলের মতো হইয়া কাটাকাটি আরম্ভ করিল।

 ধৃষ্টদ্যুম্ন আর দ্রোণেও সেদিন কম যুদ্ধ হয় নাই। যুদ্ধ করিতে কবিতে ধৃষ্টদ্যুম্নের সারথি ঘোড়া আর ধনুক কাটা গেল। তখন তিনি ভাবিলেন যে, গদা লইয়া দ্রোণকে আক্রমণ করিবেন। কিন্তু রথ হইতে নামিবার পূর্বেই দ্রোণ সেই মহাগদা কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিলেন, তারপর ধৃষ্টদ্যুম্ন ঢাল তলোযার লইয়া দ্রোণকে মারিতে চলিলেন কিন্তু তাহার বাণের মুখে অগ্রসর হয়, কাহার সাধ্য? ধৃষ্টদ্যুম্ন ঢাল দিয়া বাণ কাটাইতে ব্যস্ত রহিলেন, তাহাব আর যুদ্ধ করা হইল না।

 এই সময় ভীম ধৃষ্টদ্যুম্নের সাহায্য করিতে আসিয়া কি অদ্ভুত কাণ্ডই দেখাইলেন! কলিঙ্গ আর তাহার পুত্র শত্রুদেব কিছুকাল তাহার সহিত খুব যুদ্ধ করিয়াছিলেন, এমনকি, তাহাদের ভয়ে তাহার সঙ্গের চেদি দেশীয় সৈন্যগুলি তাহাকে ফেলিয়া পলায়ন কবিতেও ত্রুটি করে নাই। শত্রুদেব ভীমের ঘোড়া অবধি মারিয়া ফেলেন। কিন্তু তাহার পরেই ভীম এমন এক গদা ছুঁড়িয়া মারিলেন যে, তাহাতে শত্রুদেব আর তাহার সারথির শরীর চূর্ণ হইয়া গেল।

 তারপর ভানুমানের সহিত ভীমের যুদ্ধ হয়। ভানুমান ছিলেন হাতির উপরে আর ভীম মাটির উপরে। ভীম খড়্গ হাতে একলাফে সেই হাতির উপরে উঠিয়া, ভানুমান এবং হাতি উভয়কেই কাটিয়া ফেলিলেন। তারপর ভীম হাতি, ঘোড়া যাহা সম্মুখে পান, তাহাই খড় দিয়া খণ্ড খণ্ড করেন। লাথির চোটে কত মানুষ পুঁতিয়া গেল। হাঁটুর গুঁতায় কত যোদ্ধা ঠিকরাইয়া পড়িতে লাগিল। এ সকল কাণ্ড দেখিয়া কে কোথায় পলাইবে তাহার ঠিকানাই রহিল না।

 তারপর ভীম কলিঙ্গ আর কেতুমানকে মারিয়া, দুইহাজার সাতশত কলিঙ্গ সেনা বধ করিলেন।

 আর এক স্থানে দুর্যোধন অনেক যোদ্ধা লইয়া অভিমন্যুকে ঘিরিয়াছে। অভিমন্যুর তাহাতে কিছুমাত্র ভয় হয় নাই। কিন্তু অর্জুন যখন দেখিলেন যে তাহার পুত্রকে দুরাত্মারা ঘিরিয়া ফেলিয়াছে তখন আর তিনি তাহার কাছে আসিয়া থাকিতে পারিলেন না। এদিকে ভীষ্ম, দ্রোণ প্রভৃতি বড় বড় বীরেরা অর্জুনকে আটকাইবার জন্য আসিয়া উপস্থিত। তখন