পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
টুনটুনির বই
২৭

এখন খেলে তো শুধু হাড় আর চামড়া খাবি, আমার গায়ে কি আর কিছু আছে?’

ভাল্লুক লাউ নেড়ে-চেড়ে দেখছে

শুনে ভাল্লুক বললে, ‘আচ্ছা, তবে মোটা হয়ে আয়, তারপর খাব এখন।’

এই বলে ভাল্লুক চলে গেল। বুড়িও আর খানিক দূর গিয়েই তার নাতনীর বাড়ি পৌঁছল। সেখানে দই আর ক্ষীর খেয়ে-খেয়ে এমনি মোটা হল যে, কি বলব! আর একটু মোটা হলেই সে ফেটে যেত।

তাই সে তার নাতনীকে বললে, ‘ওগো নাতনী, আমি তো বাড়ি চললুম।

এবারে আর আমি চলতে পারব না। আমাকে গড়িয়ে যেতে হবে। আবার পথে ভাল্লুক, বাঘ আর শিয়াল হাঁ করে বসে আছে। আমাকে দেখতে পেলেই ধরে খাবে। এখন বল দেখি কি করি?’

নাতনী বললে, ‘ভয় কি দিদিমা? তোমাকে এই লাউয়ের খোলটার ভিতরে পুরে দেব। তাহলে বাঘ ভাল্লুক বুঝতেও পারবে না, তোমাকে খেতেও পারবে না।’

বলে, সে বুড়িকে একটা লাউয়ের খোলার ভিতর পুরে, তার খাবার জন্যে চিঁড়ে আর তেঁতুল সঙ্গে দিয়ে, হেঁইয়ে বলে লাউয়ে ধাক্কা দিলে, আর লাউ গাড়ির মতন গড়গড়িয়ে চলল।

লাউ চলেছে আর বুড়ি তার ভিতর থেকে বলছে—

লাউ গড়-গড়, লাউ গড়-গড়
খাই ছিঁড়ে আর তেঁতুল,
বীচি ফেলি টুল্-টুল্।
বুড়ি গেল ঢের দূর!

 পথের মাঝখানে সেই ভাল্লুক হাঁ করে বসে আছে, বুড়িকে খাবে বলে। সে বুড়ি-টুড়ি কিছু দেখতে পেলে না, খালি দেখলে একটা লাউ গড়িয়ে যাচ্ছে। লাউটাকে নেড়ে-চেড়ে দেখলে, বুড়িও নয়, খাবার জিনিসও নয়। আর তার ভিতর থেকে কে যেন বলছে, ‘বুড়ি গেল ঢের দূর!’ শুনে সে ভাবলে, বুড়ি চলে গিয়েছে। তখন সে ঘোঁৎ করে তাতে দিলে এক ধাক্কা আর সেটা গাড়ির মতন গড়গড়িয়ে চলল।

 লাউ চলছে আর বুড়ি তার ভিতর থেকে বলছে—

‘লাউ গড়-গড়, লাউ গড়-গড়,
খাই ছিঁড়ে আর তেঁতুল,
বীচি ফেলি টুল্-টুল্।
বুড়ি গেল ঢের দূর!’