পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 একথায় কৃষ্ণ সন্তুষ্ট হইয়া, আবার আসিয়া ঘোড়ার রাশ হাতে লইলেন। ইহার পর সন্ধ্যা পর্যন্ত অর্জুন যে কি ভীষণ যুদ্ধ করিলেন, তাহা আর কি বলিব। তাহার গাণ্ডীব হইতে অদ্ভুত ইন্দ্র-অস্ত্র এবং আগুনের মতন উজ্জ্বল আরো অসংখ্য বাণ উল্কা ধারার ন্যায় অবিরাম ছুটিয়া গিয়া কৌরবদিগকে ধানের মতো কাটিতে লাগিল। ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপ, শল্য, ভূরিশ্রবা, বাত্নীক প্রভৃতি সকলে হরিয়া গেলেন। তাহা দেখিয়া কৌরব-সৈন্যেরা সেই যে রণস্থল হইতে চাঁচাইয়া ফু দিল, আর শিবিরের ভিতরে না গিয়া থামিল না।

 পরদিন আবার মহারণ আরম্ভ হইল। প্রথমে ভীষ্ম, অর্জুন আর অভিমন্যু প্রভৃতি ঘোর যুদ্ধ করেন। তারপর ধৃষ্টদ্যুম্ন কিছুকাল সাংযমনির পুত্রের সহিত যুদ্ধ করিয়া, গদাঘাতে তাহার মাথা গুঁড়া করিয়া দেন।

 কিন্তু সেদিনকার যুদ্ধে বাস্তবিক ভয়ানক কাণ্ড যদি কেহ করিয়া থাকেন, তবে সে ভীম! ভীম গদা হাতে হাতি, ঘোড়া, রথী, পদাতি সকলকে পিষিতে আরম্ভ করিলে দুর্যোধন তাহাকে মারিবার জন্য অনেকগুলি সৈন্য পাঠাইয়া দেন। সে সকল সৈন্য মারা গেলে, কিছুকাল ভীষ্ম আর অলম্বুষের সহিত সাত্যকির যুদ্ধ চলে। তারপর দুর্যোধনের সহিত ভীমের দেখা হয়। দুর্যোধন একবার বাণাঘাতে ভীমকে অজ্ঞান করিয়া দেন। ভীম অবিলম্বে আবার উঠিয়া দুর্যোধনকে মারেন আট বাণ, আর শল্যকে পচিশ। শল্য বেগতিক দেখিয়া তখনই পলায়ন করিলেন।

 তখন সেনানী, সুষেণ, জলসন্ধ, সুলোচন, উগ্ন, ভীমরথ, ভীম, বীরবাহু, আলোপুর, দুর্মুখ, দুধ, বিবিসু, বিকট এবং সম নামক দুর্যোধনের চৌদ্দ ভাই একসঙ্গে আসিয়া ভীমকে আক্রমণ করেন। ভীমের তাহাতে সন্তোষ ভিন্ন অসন্তোষের কোনো কারণ ছিল না। তিনি তাহাদিগকে হাতের কাছে পাইয়া, মনের সুখে এক একটি করিয়া সংহার করিতে লাগিলেন। প্রথমে সেনানী, তারপর জলসন্ধ, তারপর সুষেণ, তারপর উগ্র, বীরবাহু, ভীমরথ, সুলোচন—দেখিতে দেখিতে সাতটির প্রাণ গেল। ইহার পর আর বাকি সাতটির উধর্বশ্বাসে পলায়ন ভিন্ন উপায় রহিল না।

 এ সকল কাণ্ড দেখিয়া ভীষ্ম কৌরবদিগকে কহিলেন, “ঐ দেখ, ভীম বোকাগুলিকে পাইয়া একেবারে শেষ করিল! তোমরা শীঘ্র যাও।”

 সে কথায় ভগদত্ত ভীমকে আক্রমণ করিয়া, খানিক যুদ্ধের পর, একেবারে তাহাকে অজ্ঞান করিয়া ফেলেন। ভীম অজ্ঞান হওয়ামাত্রই বিশাল বিশাল হতির উপরে অগণ্য রাক্ষস লইয়া ঘোর বেগে ঘটোৎকচ আসিয়া উপস্থিত। তখন ভগদত্তকে বাচানোই কঠিন হইল। ততক্ষণ সন্ধ্যাও হইয়া আসিতেছিল। সুতরাং ভীষ্ম তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করিয়া সেদিনকার মতন কৌরবদিগকে ঘটোৎকচের হাত হইতে রক্ষা করিলেন।

 পরদিন প্রভাতে কৌরবেরা মকর’ ব্যুহ ও পাণ্ডবেরা ‘শ্যেন’ ব্যহ করিয়া যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইলেন।

 প্রথমে ভীমার্জুন আর ভীষ্মের যুদ্ধ হইল, তারপর দ্রোণ আর সাত্যকির। সাত্যকি দ্রোণের হাতে একটু জল হইয়া আসিলে ভীম দ্রোণকে অনেক বাণ মারিয়া তাহাকে ছড়াইয়া দেন।ইহাতে ভীষ্ম, দ্রোণ আর শল্য রোষভরে ভীমকে আক্রমণ করায় অভিমন্যু দ্রৌপদীর পুত্রগণসহ ভীমের সাহায্য করিতে লাগিলেন।