পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৭১

 এমন সময় শিখণ্ডী ধনুর্বাণ হাতে ভীষ্মকে আক্রমণ করিলেন। কিন্তু ভীষ্ম তো আর তাহার সহিত যুদ্ধ করিবেন না। শিখণ্ডী যতই বাণ মারেন, ভীষ্মের তাহাতে ভ্রুক্ষেপ নাই।

 ততক্ষণে দ্রোণ সেখানে আসিয়া উপস্থিত হওয়ায়, শিখণ্ডীকে পলায়ন করিতে হইল। তারপর সকলে যুদ্ধে মাতিয়া রণস্থলে ভীষণ কাণ্ড উপস্থিত করিলেন। বেলা যায়, তথাপি যুদ্ধের বিরাম নাই। সেদিন সাত্যকি দুর্যোধনের অনেক সৈন্য মারেন। দুর্যোধন দশ হাজার সৈন্য পাঠাইয়া তাহাকে থামাইতে চেষ্টা করিয়াছিলেন, সেই দশ হাজার সৈন্যও তাহার হাতে মারা গেল।

 এই সময়ে ভূরিশ্রবা আসিয়া সাত্যকিকে ঘোরতররূপে আক্রমণ করাতে তাহার সঙ্গের লোকেরা তাহাকে ফেলিয়া পলায়ন করিল। সাত্যকির দশ পুত্র তাহার সাহায্যের জন্য ছুটিয়া আসিলেন। কিন্তু ভূরিশ্রবার বজ্রসম বাণের আঘাতে, দেখিতে দেখিতে তাহাদের দেহ চুর্ণ হইয়া গেল। তারপর বেলা আর অতি অল্পই অবশিষ্ট ছিল, কিন্তু এই অল্প সময়ের মধ্যেই অর্জুন পঁচিশ হাজার মহারথী মারিয়া শেষ করিলেন। এইরূপে সেদিনকার যুদ্ধ শেষ হইল।

 পরদিন পাণ্ডবদের মকর’ ব্যুহ এবং কৌরবদের ‘ক্রৌঞ্চ’ ব্যুহ করিয়া সৈন্য সাজানো হইল। সেদিনকার যুদ্ধে ভীম এবং ধৃষ্টদ্যুম্নের যে বীরত্ব দেখা গিয়াছিল, তাহার তুলনা দুর্লভ। ভীমকে দেখিতে পাইয়াই দুঃশাসন তাহার আর বারোটি ভাইকে ডাকিয়া বলিলেন, “এস ভাইসকল। আজ ইহাকে মারিব।”

 তখন হাজার হাজার রথী লইয়া তেরো বীর ভীমকে আক্রমণ করিলেন। ভীমের তাহা গ্রাহ্যই হইল না; তিনি ভাবিলেন, আগে রথীগুলিকে শেষ করিয়া লই! তারপর তিনি গদা হাতে রথ হইতে নামিয়া, একদিক হইতে কৌরব সৈন্য মারিতে আরম্ভ করিলেন।

 এদিকে ধৃষ্টদ্যুম্ন যুদ্ধ করিতে করিতে সেখানে আসিয়া ভীমের শুন্য রথখানি দেখিয়া ব্যস্তভাবে সারথিকে জিজ্ঞাসা করিলেন, “হায়! হায়। শূন্য রথ কেন? ভীম কোথায়?”

 সারথি বলিল, “তিনি কৌরব মারিবার জন্য গদা হাতে নামিয়া গিয়াছেন।”

 ভীম যে পথে গিয়াছেন, গদার ঘায় ক্রমাগত হাতি মারিয়া গিয়াছে। সেই হাতিগুলি দেখিয়া তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করিতে বিলম্ব হইল না। ভীম তখন ছোট সৈন্য শেষ করিয়া রাজা মারিতে ব্যস্ত। অতঃপর তাহারা দুজনে মিলিয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। এই সময়ে দুর্যোধনের কতকগুলি ভাই সেখানে আসিয়া উপস্থিত হইবামাত্র, ধৃষ্টদ্যুম্ন সম্মোহন অস্ত্র দ্বারা তাহাদিগকে অজ্ঞান করিয়া ফেলাতে বেচারারা যুদ্ধ করিতে পাইল না!

 ইহার পর দ্রোণ ধৃষ্টদ্যুম্নের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিয়া পাণ্ডবদিগকে বড়ই অস্থির করিয়া তোলেন। পাণ্ডবগণ কিছুতেই তখন তাহাকে বারণ করিতে পারেন নাই। তারপর ভীষ্ম আর অর্জুন কিছুকাল ভয়ানক যুদ্ধ হয়। এইরূপে সমস্ত দিনই নানা স্থানে তুমুল যুদ্ধ হইয়াছিল। কিন্তু কোন ঘটনা সেদিন ঘটে নাই।

 সেদিনকার যুদ্ধ শেষ হইলে, যুধিষ্ঠির ভীম আর ধৃষ্টদ্যুম্নকে আদর করিয়া মনের সুখে শিবিরে গেলেন।

 পরদিন কৌরবদিগের হইল মণ্ডপ’ ব্যুহ আর পাণ্ডবদের বস্ত্র ব্যুহ। সেদিন প্রথম বেলায় বিরাটের পুত্র শঙ্খ দ্রোণের হাতে মারা যান।

 সাত্যকি আর অলম্বুষে সেদিন খুব যুদ্ধ হইয়াছিল। অলম্বুষ রাক্ষস, ঘোর মায়াবী। তাই