পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৭২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সে আগে মায়া দ্বারা সাত্যকিকে ভুলাইতে চেষ্টা করে। কিন্তু সাত্যকি অর্জুনের ছাত্র, তাঁহার নিকট ইন্দ্র-অস্ত্র শিক্ষা করিয়াছিলেন; সেই ইন্দ্র-অস্ত্র দিয়া তিনি রাক্ষসের সকল মায়া উড়াইয়া দিলেন। তখন সে পলাইতে পারিলে বাঁচে।

 অর্জুনের পুত্র ইরাবান, বিন্দ ও অনুবিন্দের সহিত যুদ্ধ করিয়া তাহাদিগকে পরাজয় করেন। ঘটোৎকচ ভগদত্তকে আক্রমণ করিয়াছিলেন। কিন্তু ভগদত্ত অসাধারণ যোদ্ধা;তাহার যুদ্ধ কেহ সহিতে পারে না। ঘটোৎকচ কিছুকাল তাহার সহিত খুব তেজের সহিত যুদ্ধ করিয়া শেষে পলায়ন করিতে বাধ্য হইল।

 শল্য সেদিন নকুল ও সহদেবকে আক্রমণ করিতে গিয়া, শেষে একটু জব্দ হন। মেঘ যেমন সূর্যকে ঢাকে, সহদেব তেমনি করিয়া বাণের দ্বারা শল্যকে ঢাকিয়া ফেলিয়াছিলেন। শল্য সহদেবের মামা; কাজেই তাহার বাণে আচ্ছন্ন হইয়াও তিনি অতিশয় সন্তুষ্ট হইলেন। খানিক বেশ জোরের সহিতই যুদ্ধ চলিয়াছিল। তারপর সহদেবের এক বাণ খাইয়া শল্য আর বসিয়া থাকিতে পারিলেন না। সারথি দেখিল, মদ্ররাজ অজ্ঞান হইয়া গিয়াছেন, সুতরাং সে রথ লইয়া প্রস্থান করিল।

 বেলা দুই প্রহরের সময় শ্রতায়ু যুধিষ্ঠিরের বাণ খাইয়া পলায়ন করেন। ভীষ্ম, দ্রোণ আর অর্জুনও সেদিন বহু সৈন্য বধ করেন। তারপর ক্রমে সন্ধ্যা হইল, সেদিনকার যুদ্ধও থামিল।

 পরদিন প্রভাতে কৌরবে সাগরের মতো ভয়ানক এক ব্যুহ প্রস্তুত করিলেন। তাহা দেখিয়া যুধিষ্ঠির ধৃষ্টদ্যুম্নকে বলিলেন, “তুমি শৃঙ্গাটক’ ব্যুহ রচনা কর।”

 সেদিন সকালবেলায় ভীষ্ম অসীম তেজের সহিত যুদ্ধ করিতে লাগিলেন। সে সময়ে এক ভীম ছাড়া আর এমন কেহই উপস্থিত ছিল না যে তাহাকে আটকায়। ভীম ভীষ্মকে আক্রমণ করিলেন; আর দুর্যোধন ভ্রাতাগণসহ তাহাকে রক্ষা করিতে লাগিলেন। ভীমের প্রথম কাজই হইল, ভীষ্মের সারথিটিকে সংহার করা। সারথি নাই, ঘোড়া কে থামাইবে? তাহারা রথ লইয়া রণস্থলময় ছুটাছুটি করিতেছে। সেই ফাঁকে ভীমও দুর্যোধনেব ভাই সুনাভের মাথাটি কাটিয়া বসিয়া আছে। সুনাভের মৃত্যুতে আদিত্যকেতু, বশী, কুণ্ডধার, মহোদর, অপরাজিত, পণ্ডিত ও বিশালাক্ষ নামক দুর্যোধনের আর সাত ভাই ক্ষেপিয়া ভীমকে মারিতে লাগিল। ভীমও তাহাদিগকে সম্মুখে পাইয়া আর সংহার করিতে বিলম্ব করিলেন না।

 তাহা দেখিয়া দুর্যোধন কাঁদিতে কাঁদিতে ভীষ্মকে বলিলেন, “দাদামহাশয়, ভীম তো ভাইগুলিকে মারিয়া ফেলিল। আপনার যুদ্ধে উৎসাহ নাই!”

 ভীষ্ম বলিলেন, “আগে তো শুন নাই! ভীম কি তোমাদিগকে পাইলে ছড়িবে? আমি আর দ্রোণ যথাসাধ্য যুদ্ধ করিতেছি, করিবও।”

 অর্জুনের পুত্র ইরাবান সেদিন অসাধারণ বীরত্ব দেখাইয়াছিলেন। শকুনি আর তাহার ছয় ভাই মিলিয়া ইরাবানকে আক্রমণ করেন। সাতজনে মিলিয়া চারিদিক হইতে মারে, কাজেই ইরাবান প্রথমে তাহাদিগের কিছু করিয়া উঠিতে পারেন নাই। তাহার শরীর অস্ত্রের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হইয়া গেল, দর দর ধারে রক্ত পড়িতে লাগিল। তখন ইরাবান অসিচর্ম (খড়্গ ও ঢাল) হাতে রথ হইতে নামিলেন। শত্রুরা এই সুযোগে তাহাকে মারিতে চেষ্টার ত্রুটি করে নাই। কিন্তু তাহারা আর কোনো অনিষ্ট করিবার পূর্বে শকুনি ছাড়া তাহাদের আর সকলে ইরাবানের খড়্গে খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল।