পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
২৭৭

করিতে কিছুমাত্র বিলম্ব করিলেন না। তারপর ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন, অভিমন্যু, সাত্যকি, ঘটোৎকচ প্রভৃতি পাণ্ডবপক্ষের সকলে তাহার বাণে অস্থির হইয়া উঠিলে, অর্জুন তাহাদিগকে রক্ষা করিলেন।

 শিখণ্ডীর বিশ্রাম নাই, আবার অর্জুন তাহার সাহায্য করিতেছে। সাত্যকি চেকিতান, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, দ্রুপদ, নকুল, সহদেব, অভিমন্যু, দ্রৌপদীর পুত্রগণ প্রভৃতি সকলে মিলিয়াও তাহাকে বাণ মারিতে ত্রুটি করিতেছে না। তথাপি ভীষ্ম কিছুমাত্র কাতর নহে। তাহার যুদ্ধ তেমনি চলিয়াছে।

 এমন সময় অর্জুন ভীষ্মের ধনুক কাটিয়া ফেলিলেন। তাহা দেখিয়া দ্রোণ, কৃতবর্মা, জয়দ্রথ, ভূরিশ্রবা, শল, শল্য ও ভগদত্ত মিলিয়া অর্জুনকে আক্রমণ করিতে যাওয়ায়, সাত্যকি, ভীম, ধৃষ্টদ্যুম্ন, বিরাট, ঘটোৎকচ আর অভিমন্যু অর্জুনের সাহায্যের জন্য ছুটিয়া আসিলেন। এদিকে শিখণ্ডী বাণে বাণে ভীষ্মকে আচ্ছন্ন করিয়াছেন। ভীষ্ম ধনুক হাতে লইলেই অর্জুন তাহা কাটিয়া ফেলিতেছে। তাহাতে ভীষ্ম এক শক্তি ছুড়িয়া মারিলে, তাহাও তিনি কাটিতে বাকি রাখেন নাই।

 তখন ভীষ্ম মনে মনে বলিলেন, কৃষ্ণ না থাকিলে এখনো আমি এক বাণেই পাণ্ডবদিগকে মারিতে পারি’ কিন্তু আমি পাণ্ডবদিগকে মারিব না, শিখণ্ডীর সহিতও যুদ্ধ করিব না। এই আমার মরিবার সুযোগ।’

 ভীষ্মের মনের ভাব বুঝিতে পারিয়া, অপর বসুগণ আকাশ হইতে বলিলেন, “তাহাই ঠিক, ভীষ্ম! আর যুদ্ধে কাজ নাই।”

 এ কথায় স্বর্গে দুন্দুভি বাজিয়া উঠিল। দেবতারা ভীষ্মের উপর পুষ্পবৃষ্টি করিতে লাগিলেন। আর এই সময় হইতে ভীষ্ম অর্জুনের সহিত যুদ্ধের চেষ্টা ছাড়িয়া দিলেন। এতক্ষণ শিখণ্ডী তাহাকে যেসকল বাণ মারিতেছিলেন তাহা তাহার গ্রাহ্যই হয় নাই। অতঃপর অর্জুন গাণ্ডীব লইয়া তাহার গায়ে ভয়ংকর বাণসকল বর্ষণ করিতে লাগিলেন। ভীষ্ম তখনো অন্যান্য যোদ্ধাগণের সহিত যুদ্ধ করিতেছিলেন, কিন্তু অর্জুনের বাণে জর্জরিত হইয়াও তিনি তাহাকে আর আঘাত করিলেন না। অর্জুন অবসর পাইয়া ক্রমাগত তাহার ধনুক কাটিয়া তাহার উপর বাণ মারিতে লাগিলেন।

 এই সময় দুঃশাসন ভীষ্মের কাছে ছিলেন। ভীষ্ম তাহাকে বলিলেন, “দুঃশাসন! এ সকল তো শিখণ্ডীর বাণ নয়, এগুলি নিশ্চয় অর্জুনের। দেখ আমার বর্ম ভেদ করিয়া বাণগুলি শরীরের ভিতরে প্রবেশ করিতেছে।”

 এই বলিয়া তিনি অর্জুনের প্রতি একটা শক্তি ছুড়িয়া মারিলে, অর্জুন তিন বাণে তাহা খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিলেন। তারপর ভীষ্ম ঢাল আর খড়্গ হাতে লইয়া মনে করিলেন, হয় মরিব, না হয় সকলকে মারিব। কিন্তু তিনি খড়্গ চর্ম হাতে রথ হইতে নামিবার পূর্বেই তাহাও অর্জুন কাটিয়া শত খণ্ড করিলেন।

 এদিকে কৌরবেরা ভীষ্মকে রক্ষার জন্য কত চেষ্টাই করিতেছেন, কিন্তু পাণ্ডবেরা তাহাদিগকে কিছুই করিবার অবসর দিতেছে না। অর্জুনের বাণে ভীষ্মের শরীর এরূপ ক্ষতবিক্ষত হইয়াছে যে, আর দু আঙ্গুল স্থানও অবশিষ্ট নাই। এইরূপে ক্ষত-বিক্ষত হইয়া, সূর্যাস্তের কিঞ্চিৎ পূর্বে, ভীষ্ম রথ হইতে পড়িয়া গেলেন। পৃথিবী কাপিয়া উঠিল। ‘হায়