পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৮৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তাহার নিকট পরাজিত হইতে হইল। দ্বৈত বনে ভীমের হাতে মার খাইয়া জয়দ্রথ শিবের তপস্যা করেন। তখন শিব তাহাকে বর দেন যে তুমি অর্জুন ভিন্ন আর চারি পাণ্ডবকে যুদ্ধে পরাজয় করিবে; সেই বরের জোরে আজ জয়দ্রথের এত পরাক্রম।

 এদিকে অভিমন্যু বৃষসেনকে পরাজয়পূর্বক বসাতীকে মারিয়াছেন। তারপর কৌরবপক্ষের অনেকে মিলিয়া তাহাকে আক্রমণ করিলে, তাহাদিগকেও কাটিয়া খণ্ড খণ্ড করিয়াছে; শল্যের পুত্র রুকনরথকে মারিয়া গান্ধব-অস্ত্রে অনেক যোদ্ধাকে অজ্ঞান করত, তাহাদিগকে বধ করিয়াছে।

 বাস্তবিক কেহই তাহার নিকট হইতে অক্ষত শরীরে ফিরিতে পায় নাই। দ্রোণ, কৃপ, কর্ণ, অশ্বত্থামা, কৃতবর্মা ও হার্দিক এই ছয়জনে এক সঙ্গে তাহাকে আক্রমণ করিতে গিয়া ছয়জনই পরাজিত হইলেন। তারপর ক্রাথের পুত্র আসিয়া মারা গেল। তারপর আবার সেই দ্রোণ প্রভৃতি ছয়জনের পরাজয়;তারপর বৃক্ষারক এবং বৃহহুলের মৃত্যু। আর কত বলিব? ক্রমাগত যোদ্ধারা আসে, আর অভিমন্যুর অস্ত্রে মারা যায়। কৌরবেরা বেশ বুঝিতে পারিলেন যে, আজ ইহার হাতে আর তাহাদের রক্ষা নাই।

 তখন শকুনি বলিলেন, “চল সকলে মিলিয়া উহাকে মারি, নচেৎ ও আমাদের সকলকেই বধ করিবে।”

 কর্ণ তখন দ্রোণকে বলিলেন, “শীঘ্র ইহাকে মারিবার উপায় করুন। নচেৎ আর রক্ষা নাই!”

 এ কথায় দ্রোণ বলিলেন, “উহার কবচ ভেদ করা অসম্ভব। কিন্তু চেষ্টা করিলে, উহার সুক কাটিয়া, সারথি প্রভৃতি মারিয়া উহার যুদ্ধ বন্ধ করিয়া দিতে পার। উহার হাতে ধনুক থাকিতে দেবতাগণেরও উহাকে পরাজয় করিবার সাধ্য নাই। সুতরাং আগে উহার ধনুক কাট; তারপর যুদ্ধ করিও।”

 এই কথায় কর্ণ হঠাৎ বাণ মারিয়া, অভিমন্যুর ধনুকটি কাটিলেন, ভোজ তাহার ঘোড়াগুলিকে মারিলেন, কৃপ সারথিকে বধ করিলেন; এইরূপে তাহাকে সঙ্কটে ফেলিয়া, নিষ্ঠুর ছয় মহারথ এককালে সেই বীর বালককে প্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন।

 ধনুক নাই রথ নাই। অভিমন্যু খড়্গ চর্ম লইয়া যুদ্ধ আরম্ভ করিলেন। তাহাও দ্রোণ আর কর্ণের ছলনায় দেখিতে দেখিতে কাটা গেল। চক্র নিলেন, তাহাও চারিদিক হইতে বাণ বিধিয়া অভিমন্যুর দেহ সজারুর দেহের মতো হইয়া গিয়াছে।

 এই সময়েও অভিমন্যু গদাঘাতে সত্তরটি সঙ্গীসমেত কালিকেয় এবং অপর সতেরজন রথীও দট হাতিকে মারিয়া দুঃশাসনের পুত্রের রথ ও ঘোড়া চূর্ণ করেন। তখন দুঃশাসনের পুত্রও গদা লইয়া তাহাকে আক্রমণ করে। দুইজনেই দুজনের গদার বাড়িতে ঠিকরাইয়া পড়েন। কিন্তু দুঃশাসনের পুত্র আগে উঠিয়া অভিমন্যুর মাথায় সাংঘাতিক গদার আঘাত করে। এইরূপ অন্যায় যুদ্ধে সে বালক মহাবীরকে সকলে মিলিয়া নির্দয়ভাবে হত্যা করিল।

 কৌরবগণ তাহাদের পাপকর্ম শেষ করিয়া বড়ই আনন্দিত হইলেন। আর পাণ্ডবদের কথা কি বলিব? তাহাদের দুঃখ লিখিয়া জানানো সম্ভব নহে। অভিমন্যুর মৃত্যুতে সৈন্যরা ভয় পাইয়া পলায়ন করিতেছিল; যুধিষ্ঠির অনেক কষ্টে তাহাদিগকে ডাকিয়া ফিরাইলেন। তারপর সকলে যুধিষ্ঠিরকে ঘিরিয়া চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন, কাহারো মুখে কথা বাহির