পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/২৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২১৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 কিন্তু কৃষ্ণ তাহাতে অসম্মত হইয়া বলিলেন, “তোমাকে মারিবার জন্য কর্ণ ইন্দ্রের সেই একপুরুষঘাতিনী শক্তি রাখিয়া দিয়াছে অতএব এখন তোমার তাহার কাছে যাওয়া উচিত নহে। ঘটোৎকচকে পাঠাও।”

 তখন অর্জুনের কথায় ঘটোৎকচ গিয়া কর্ণের সহিত যুদ্ধ আরম্ভ করিল। এদিকে সেই টাসুরের পুত্র অলম্বল নামক রাক্ষস আসিয়া দুর্যোধনকে বলিল, “হেই মোহারাজ্জ! মোকে বোলনা, মুহি পাণ্ডোধেররকে মারকে খাই। ই লোক মোর বাপ্পুকে মারিলেক!”

 দুর্যোধনের ইহাতে কোনো আপত্তি হওয়ার কথা ছিল না। সুতরাং তখন অলম্বল আর ঘটোৎকচে যুদ্ধ আরম্ভ হইল। দুই রাক্ষস মিলিয়া কি অদ্ভুত যুদ্ধই করিয়াছিল! অস্ত্র দিয়া, নখ দিয়া, দাঁত দিয়া, কীল, লাথি, চড় মারিয়া সাদাসিধা যুদ্ধ তো প্রথমে তাহারা করিলই, শেষে আরম্ভ হইল মায়াযুদ্ধ একজন যেইমাত্র আগুন হইল, অমনি আর একজন হইল জল! তখন এ হইল তক্ষক, অমনি ও হইল গরুড়! এ হইল মেঘ, ও হইল ঝড়; মেঘ হইল পর্বত, ঝড় হইল বজ্র। পর্বত হইল হাতি, বজ্র হইল বাঘ! হাতি গেল সূর্য হইয়া বাঘকে পোড়াইতে, অমনি বাঘ আসিল রাহু হইয়া সূর্যকে গিলিতে!

 এইরূপে অসম্ভব অদ্ভুত যুদ্ধের পর ঘটোৎকচ অলম্বলের মাথা কাটিয়া তারপর কর্ণকে আক্রমণ করিল। দুইজনেই বীর, কাহারো তেজ কম নহে। কত বাণ ঘটোৎকচ কর্ণকে মারিল, কত বাণ কর্ণ ঘটোৎকচকে মারিলেন। দুজনের কাঁসার কবচ ছিড়িয়া গেল। দুজনের শরীরই রক্তে লাল হইল। শেষে কর্ণ ঘটোৎকচের ঘোড়া মারিয়া আর রথ ভাঙ্গিয়া দিলে, সে মায়া দ্বারা এমনি কিট চেহারা করিল যে কি বলিব! কর্ণ বাণ মারেন, আর সে হা ঁকরিয়া তাহা গিলে। দেখিতে দেখিতে সে বুড়া আঙ্গুলটির মতন ছোট হইয়া যায়, আবার তখনি বিশাল পর্বতের বেশে আসিয়া উপস্থিত হয়। ইহার মধ্যে তাহার একশতটা মাথা হইয়া গেল। তারপর হঠাৎ আর সে নাই, সে পাতালে ঢুকিয়া গিয়াছে। আবার মুহূর্তেকের ভিতরেই, সে পাহাড় সাজিয়া শূন্যমার্গে আকাশে আসিয়া উপস্থিত। সেই পাহাড় হইতে কত শেল, কত শূল, কত গদা যে কর্ণের মাথায় পড়িল, তাহার অস্তই নাই। তারপর আবার অসংখ্য বিকট রাক্ষস কোথা হইতে আনিয়া উপস্থিত করিল! এইরূপে কত মায়া যে সে দেখাইল, তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না, কিন্তু কর্ণ কিছুতেই কাতর হইলেন না।

 ইহার মধ্যে অলায়ুধ নামক একটা ভয়ংকর রাক্ষস আসিয়া ঘটোৎকচকে আক্রমণ করিল। তখন ভীম ঘটোৎকচের সাহায্য করিতে আসিলে, অলায়ুধের সহিত তাহার ভীষণ যুদ্ধ হইল। অলায়ুধ সেই বকের ভাই, কাজেই ভীমের উপর তাহার বড়ই রাগ। আর সে রাগের উপযুক্ত বলও তাহার ছিল। সুতরাং সে ভীমকে সহজে ঘড়িল না। এই সময়ে ঘটোৎকচ কর্ণকে ছাড়িয়া আসিয়া তাহাকে আক্রমণ না করিলে, হয়তো সে ভীমকে পরাজয়ই করিত।

 ঘটোৎকচ অনেক কষ্টে অলায়ুধকে বধ করিয়া, আবার কর্ণের সহিত যুদ্ধ করিতে গেল। খানিক যুদ্ধের পর সে কর্ণের ঘোড়া আর সারথিকে মারিয়া হঠাৎ আর সেখানে নাই। তারপর আবার আসিয়া সে কি ভয়ংকর মায়াযুদ্ধই যে আরম্ভ করিল, তাহা কি বলিব। তখন অগ্নিকর্ণ মেধসকল আকাশ হইতে ক্রমাগত বন্ধু, উকা, বাণ, শক্তি, প্রাস, মুষল, পরশু, খড়, পটি, তোমর, পরিঘ, গদা, শূল, শতঘ্নী, পাথর প্রভৃতি বর্ষণ করিতে লাগিল। কর্ণের আর তখন এমন শক্তি হইল না যে, তাহা বারণ করেন। ইহার উপরে আবার শত শত রাক্ষস