পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩০৩

তাঁহাদের রক্ষা নাই। সুতরাং সেদিন যুদ্ধ আরম্ভের সময় সকলেরই খুব উৎসাহ দেখা গেল।

 আজ বিশাল হাতিতে চড়িয়া ভীম যুদ্ধে নামিয়াছে। যাহার সহিত প্রথমে তাহার যুদ্ধ হইল, তাহার নাম ক্ষেমমুর্তি,তিনিও হাতির উপরে এবং অসাধারণ বীরও বটে, প্রথমে যুদ্ধ অনেকটা সমানে সমানেই চলিল;এমনকি, ক্ষেমমূর্তিই আগে নারাচের গায়ে ভীমের হাতিকে মারিয়া ফেলিলেন। ভীম সেই হাতি পড়িবার পূর্বেই তাহা হইতে লাফাইয়া পড়িয়া ক্ষেমমূর্তির হাতিকে এমনি লাথি মারিলেন যে, হাতি তাহাতে চেপ্টা হইয়া মাটির ভিতর ঢুকিয়া গেল। তখন ক্ষেমমূর্তি মাটিতে নামিয়া রোষভরে যুদ্ধে অগ্রসর হওয়ামাত্র ভীম গদাঘাতে তাহার প্রাণ বারি করিয়া দিলেন।

 তারপর অশ্বত্থামার সহিত ভীমের অনেকক্ষণ যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ করিতে করিতে, শেষে দুজনেই অজ্ঞান হইয়া যাওয়ায়, সারথিরা তাহাদিগকে লইয়া প্রস্থান করে।

 এদিকে অর্জুনকে অবশিষ্ট সংশপ্তকদিগের সহিত ঘোর যুদ্ধে রত দেখিয়া অশ্বত্থামা তাহাকে আক্রমণ করিলেন, এবং বেশ একটু জব্দও হইলেন। তখন অর্জুন আবার সংশপ্তকদিগকে আক্রমণ করামাত্র আবার অশ্বত্থামা আসিয়া উপস্থিত। কিন্তু এবারে হাতে বুকে ও মাথায় বাণের খোঁচা খাইয়া অশ্বথামা একটু বিশেষরূপে সাজা পাইলেন। তাহার ঘোড়াগুলিরও কম দুর্দশা হইল না। ইহার উপর আবার তাহাদের রাশ কাটিয়া যাওয়াতে, তাহারা অশ্বত্থামাকে লইয়া সেখান হইতে যে ছুট দিল আর রণক্ষেত্রের বাহিরে না গিয়া থামিল না। অশ্বত্থামাও ভাবিলেন, ভালোই হইয়াছে।

 তারপর আর একজন অর্জুনকে আক্রমণ করিলেন, তাহার নাম দণ্ডধার। তিনি মরিলে আসিলেন তাহার ভাই দণ্ড। দণ্ড মরিলে আবার সংশপ্তকেরা আসিল।

 অপরদিকে কর্ণও পাণ্ড্যকে বধ করিয়া বিস্তর পাণ্ডব সৈন্য মারিয়াছে। তারপর নকুলকে আক্রমণ করাতে দুজনে যুদ্ধ চলিয়াছে। দুজনেই দুজনের বাণে আচ্ছন্ন, মেঘের ছায়ার ন্যায় বাণের ছায়ায় রণস্থল ঢাকিয়া গিয়াছে। এমন সময় কর্ণের বাণে নকুলের ধনুক কাটা গেল, তারপর দেখিতে দেখিতে তাহার সারথি, ঘোড়া, রথ, অস্ত্র সকলই গেল, আর তাহার যুঝিবার ক্ষমতা রহিল না। তখন তিনি পলায়নের আয়োজন করামাত্র কর্ণ আসিয়া তাহার গলায় ধনুকের ফাঁস লাগাইয়া দেওয়াতে বেচারার সে পথও বন্ধ হইয়া গেল। কর্ণ ইচ্ছা করিলেই তখন নকুলকে বধ করিতে পারিতেন, কিন্তু কুন্তীর কথা মনে করিয়া, কেবল এই বলিয়াই ছাড়িয়া দিলেন, “যাও, ঘরে যাও! আর বড় বড় কৌরবদের সহিত যুদ্ধ করিতে আসিও না!”

 ইহার পর আর কর্ণের বিক্রম সহ্য করিতে না পারিয়া, সৈন্যদের দুগতির একশেষ হইয়া উঠিল।

 এদিকে কৃপের হাতে পড়িয়া ধৃষ্টদ্যুম্নেরও প্রায় সেই দশা। অনেকে ভাবিল, তিনি বুঝি বা মারাই যান। সারথি তাহাকে বলিল, “বড়ই তো বিপদ দেখিতেছি, রথ ফিরাইব নাকি?” ধৃষ্টদ্যুম্ন বলিলেন, “আমি ঘামিয়া কাঁপিয়া আর মাথার ঠিক রাখিতে পারিতেছি না। চল এই বামুনকে ছাড়িয়া শীঘ্র ভীম বা অর্জুনের কাছে যাই।” সারথি তাহাই করিল।

 দুর্যোধন আর যুধিষ্ঠিরের যুদ্ধ অতি অদ্ভুত হইয়াছিল। দুর্যোধন যুধিষ্ঠিরের ধনুক কাটিলেন, যুধিষ্ঠির তৎক্ষণাৎ অন্য ধনুক লইয়া দুর্যোধনের ধনুক কাটিয়া তাহার উত্তর দিলেন। যুধিষ্ঠিরের