পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩০৭

কাতর হইতে হয়। তখন কৃষ্ণ আশ্চর্য হইয়া তাহাকে জিজ্ঞাসা করেন, “আজ কেন তোমার তেজ কমিয়া গেল? গাণ্ডীব কি তোমার হাতে নাই? না কি হাতে লাগিয়াছে?

 যাহা হউক, এরূপভাবে অনেকক্ষণ যায় নাই। শেষে অশ্বত্থামাকে নিতান্তই নাকাল হইয়া সেখান হইতে চলিয়া যাইতে হয়।

 ইহার পরে অশ্বত্থামা ধৃষ্টদ্যুম্নকে আক্রমণ করেন। ধৃষ্টদ্যুম্নের ধনুক, রথ, ঘোড়া, সারথি প্রভৃতি মুহূর্তের মধ্যে চূর্ণ হইয়া গেল। তারপর তাহাকে খালি হাতে পাইয়া, অশ্বত্থামা বাণে বাণে তাহাকে ক্ষত-বিক্ষত করিলেন। কিন্তু তথাপি তিনি তাহাকে বধ করিতে পারিলেন না। তখন তিনি ছুটিয়া তাহাকে ধরিতে আসিলে, কৃষ্ণ অর্জুনকে বলিলেন, “ঐ দেখ, ধৃষ্টদ্যুম্নের কি দুর্দশা!” তখন অর্জুন অশ্বত্থামাকে আক্রমণ করিয়া ধৃষ্টদ্যুম্নের প্রাণ রক্ষা করিলেন।

 এই সময়ে কর্ণ প্রভৃতি বীরেরা, যুধিষ্ঠিরকে ধরিবার চেষ্টায়, তাহাকে আক্রমণ করেন। কর্ণের বাণে নিতান্ত ক্লেশ পাইয়াও যুধিষ্ঠির অনেকক্ষণ এমনি তেজের সহিত যুদ্ধ করেন যে, তাহাতে কৌরবদলে হাহাকার উপস্থিত হয়। কিন্তু শেষকালে কর্ণের বাণ একেবারেই অসহ্য হইয়া উঠাতে, তিনি সারথিকে বলিলেন, “শীঘ্র এখান হইতে রথ লইয়া চল।”

 তাহাতে ধৃতরাষ্ট্রের পুত্রেরা “ধর! ধর!” বলিয়া তাহার পিছু পিছু তাড়া করিল। কিন্তু পাণ্ডব সৈন্যেরা ছুটিয়া আসিয়া তাহাদিগকে এমনি শিক্ষা দিল যে, আর তাহারা বেয়াদবি করিতে সাহস পাইল না।

 এদিকে রাজা যুধিষ্ঠির, বাণাঘাতে নিতান্ত কাতর হইয়া, নকুল ও সহদেবের সঙ্গে ধীরে ধীরে শিবিরে চলিয়াছেন, ইতিমধ্যে আবার কর্ণ আসিয়া তাহার গায়ে বাণ মারিতে আরম্ভ করিলেন। তাহারা তিনজনে মিলিয়াও কর্ণকে কিছুতেই বারণ করিতে পারিলেন না। কর্ণের বাণে যুধিষ্ঠিবের ঘোড়া আর পাগড়ি, নকুলের ঘোড়া, রাশ আর ধনুক, দেখিতে দেখিতে কাটিয়া গেল। সর্বনাশের আর অধিক বাকি নাই, এমন সময় শল্য কর্ণকে বলিলেন, যুধিষ্ঠিরকে লইয়া ব্যস্ত হইয়াছ, অর্জুনের সহিত কখন যুদ্ধ করিবে? ইহাকে মারিয়া ফল কি? আগে অর্জুনকে মার। আর ঐ দেখ, দুর্যোধন ভীমের হাতে পড়িয়াছে, ইহাদিগকে ছাড়িয়া আগে তাহাকে বাঁচাও!”

 এ কথায় কর্ণ তাড়াতাড়ি দুর্যোধনকে সাহায্য করিতে গেলেন, যুধিষ্ঠিরও রক্ষা পাইলেন; আঘাতের যাতনায় তিনি এতই কাতর হইয়াছিলেন যে, শিবিরে আসিয়াই তাহাকে শয়ন করিতে হইল।

 এদিকে আবার অশ্বত্থামা আর অর্জুনের যুদ্ধ আরম্ভ হইয়াছে। এবারেও অশ্বত্থামার তেজের কোনো অভাব নেই কিন্তু তাহার সারথি হত আর ঘোড়া ক্ষিপ্ত হওয়ায় তিনি একটু বিপদে পড়িয়াছেন। ঘোড়াগুলি অর্জুনের বাণে অস্থির হইয়া, রথ রথী সকল সুদ্ধ রণস্থল হইতে ছুট দিল। তারপর পাণ্ডব যোদ্ধাগণের তাড়া খাইয়া, কৌরবদিগের সৈন্যগুলিও পলায়ন করিতে পারিলে বাঁচে।

 তখন দুর্যোধন কর্ণকে বিনয় করিয়া বলিলেন, “ঐ দেখ, তুমি থাকিতেই সৈন্যগুলি পলায়ন করিতেছে! আর তাহারা তোমাকেই ডাকিতেছে।”

এ কথায় কর্ণ তাহার বিজয় নামক বিশ্বকর্মানির্মিত সেই আশ্চর্য পুরাতন ধনুকে ভার্গব অস্ত্র জুড়িয়া নিক্ষেপ করিলে আর পাণ্ডব সৈন্যদের দুর্দশার অবধি রহিল না। তখন তাহারা