পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩০৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছেলেদের মহাভারত
৩০৯

উল্কাবৎ শক্তি খণ্ড খণ্ড করিয়া ফেলিলেন। তারপর তিনি বাণে বাণে ভীমকে জর্জরিত করিতে থাকিলে ভীম তাহাতে বিষম ক্রোধভরে বলিলেন, “তুমি তো আমাকে খুবই মারিলে, এখন আমার এই গদাটিকে সামলাও দেখি!” বলিতে বলিতে তিনি এক বিশাল গদা দুঃশাসনকে ছুঁড়িয়া মারিলেন। দুঃশাসনও ভীমকে একটা শক্তি মারিলেন বটে, কিন্তু তাহা অর্ধপথে গদায় ঠেকিয়া খণ্ড খণ্ড হইয়া গেল। তারপর সেই দারুণ গদা, দুঃশাসনের রথ আর সারথিকে চূর্ণ করিয়া, তাহার মাথায় পড়িলে, তিনি তাহার আঘাতে দশ ধনু দূরে বিক্ষিপ্ত হইলেন।

 এই অবস্থায় দুঃশাসনকে যাতনায় ছটফট করিতে দেখিয়া ভীমের সেই পুরাতন প্রতিজ্ঞার কথা মনে হইল। এই দুরাত্মাই দ্রৌপদীকে সেই সভায় চুলে ধরিয়া আনিয়া অপমান করিয়াছিল; তখন ভীম বলিয়াছিলেন, আমি ইহার বুক চিরিয়া রক্ত খাইব।

 সেই প্রতিজ্ঞার কথা মনে হওয়া মাত্র ভীম কর্ণ, দুর্যোধন, কৃপ, অশ্বত্থামা প্রভৃতিকে ডাকিয়া বলিলেন, “আজ আমি এই পাপাত্মা দুঃশাসনকে বধ করিব, তোমাদের সাধ্য থাকে তো ইহাকে রক্ষা কর।” তারপর তিনি ঝড়ের ন্যায় আসিয়া দুঃশাসনকে পদতলে পেষণপূর্বক তাহার বুকে তলোয়ার বসাইয়া দিলেন। সেই তলোয়ারের ঘায়ে দুঃশাসনের গরম রক্ত সবেগে বাহির হওয়ামাত্র, ভীম মহানন্দে তাহা পান করিয়া বলিলেন, “আহা! কি মিষ্টি! দধি দুগ্ধ বা ঘৃত পানেও আমি এত সুখী হই না।”

 ভীমকে দুঃশাসনের রক্ত খাইতে দেখিয়া, সৈন্যেরা “বাবা রে! রাক্ষস রে!” বলিয়া উদ্ধশ্বাসে পলাইতে লাগিল। এদিকে ভীম তাহার ভীষণ প্রতিজ্ঞা পালনপূর্বক, দুঃশাসনের মাথা কাটিয়া বলিলেন, “অতঃপর দুর্যোধন পশুকে মারিয়া, পদাঘাতে তাহার মস্তক চূর্ণ করিতে হইবে।”

 এই সময়ে দুর্যোধনের দশ ভাই, রোষভরে ভীমকে আক্রমণ করাতে ভীম দশ ভল্পে সেই দশজনকে সংহার করিলেন। এ সকল কাণ্ড দেখিয়া, আর ভীমের তখনকার সিংহনাদ শুনিয়া, অন্যরা তো পলায়ন করিতেই পারে, নিজে কর্ণই ভয়ে আড়ষ্ট, তাহার মুখে কথা সরে না! তখন শল্য তাহাকে বলিলেন, “এখন ওরূপ হইলে চলিবে না, তোমার কাজ কর।”

 কিন্তু কর্ণের পুত্র বৃষসেন এই সময়ে খুব যুদ্ধ করিয়াছিলেন। তাহার বাণে নকুলের ধনুক, রথ, খড়্গ প্রভৃতি কাটা গিয়া অল্পক্ষণের ভিতরেই নিতান্ত সংকট উপস্থিত হইল। ভীম, অর্জুন, কৃষ্ণ প্রভৃতিও তাহার বাণে অক্ষত রহিলেন না। এইরূপে অর্জুনের সহিত তাহার যুদ্ধ বাধিয়া যাওয়াতে, অর্জন কর্ণকে ডাকিয়া বলিলেন, “তোমরা সকলে মিলিয়া অভিমন্যুকে মারিয়াছিলে। আমি তোমাদের সম্মুখেই বৃষসেনকে মারিতেছি, ক্ষমতা থাকে তো রক্ষা কর।”

 তারপর অর্জুন হাসিতে হাসিতে দশ বাণে বৃষসেনকে ক্ষত-বিক্ষত করিয়া আর চারিটি সুরে তাহার ধনুক, দুটি হাত আর মাথা কাটিয়া ফেলিলেন ইহাতে কর্ণের প্রাণে কিরূপ লাগিয়াছিল, বুঝিতেই পার। ইহার পরেও কিন্তু আর তিনি চুপ করিয়া থাকিতে পারেন? কাজেই তখন অর্জুনের সহিত তাহার যুদ্ধ আরম্ভ হইল।

 এ সময়ে অশ্বত্থামা দুর্যোধনের দুটি হাত ধরিয়া বলিলেন, “মহারাজ, আর কেন? এখন ক্ষান্ত হও। আর পাণ্ডবদিগের সহিত যুদ্ধের প্রয়োজন নাই। যুদ্ধের মুখে ছাই। আমাদের সকলেই মরিয়া গিয়াছে, কয়েকটি মাত্র বাঁচিয়া আছি। এখন যুদ্ধ হইতে তুমি ক্ষান্ত হও,