পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।



৩২৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মহাপুরুষের দেহত্যাগের সময় হইবে। তাঁহার সহিত দেখা করিবার জন্য কৃষ্ণ, যুধিষ্ঠির, ভীম, অর্জুন, নকুল, সহদেব, সাত্যকি, কৃপ, সঞ্জয় প্রভৃতি রথে চড়িয়া যাত্রা করিলেন।

 কুরুক্ষেত্রে উপস্থিত হইয়া তাঁহারা দেখিলেন যে, সেই মহাবীরের মৃত্যুশয্যার চারিদিকে মুনি-ঋষিগণ ঘিরিয়া বসায়, সে স্থানের এক অপূর্ব শোভা হইয়াছে। দূর হইতে তাহ দেখিয়াই, সকলে রথ হইতে নামিয়া, তথায় উপস্থিত হইলেন।

 তখন কৃষ্ণ ভীষ্মের নিকটে গিয়া, বিনয়ের সহিত তাঁহাকে বলিলেন, “হে কুরুপিতামহ! আপনার তুল্য মহৎ লোক এই পৃথিবীতে কেহই নাই ধর্মের সকল তত্ত্বই আপনার জ্ঞাত। রাজা যুধিষ্ঠির শোকে অতিশয় কাতর হইয়াছেন; এ সময়ে আপনি দয়া করিয়া তাঁহাকে উপদেশ দিলে, তাঁহার শান্তিলাভ হইতে পারে৷”

 যুধিষ্ঠির লজ্জায় ভীষ্মের নিকটে গিয়া কথা বলিতে সাহস পান নাই। কিন্তু ভীষ্মের কথা শুনিয়া তিনি বলিলেন, “যুধিষ্ঠির তো যুদ্ধ করিয়া ক্ষত্রিয়ের ধর্মই পালন করিয়াছেন। সুতরাং ইহাতে তাঁহার লজ্জিত হইবার কোনো কারণ নাই৷”

 তখন যুধিষ্ঠির ভীষ্মের নিকট আসিয়া ভক্তিভরে তাঁহার পদধূলি গ্রহণ করিলে, ভীষ্ম তাঁহার মস্তক আঘ্রাণপূর্বক বলিলেন, “তোমার কোনো ভয় নাই,মন খুলিয়া আমাকে সকল কথা জিজ্ঞাসা কর৷”

 এই সময় কৃষ্ণ ভীষ্মের সকল জ্বালা-যন্ত্রণা এবং দুর্বলতা দূর করিয়া দিলেন।

 তারপর বহুদিন পর্যন্ত, যুধিষ্ঠির প্রত্যহ সেই মহাপুরুষের নিকট আসিয়া, যেসকল অমূল্য উপদেশ পাইয়াছিলেন, তোমরা বড় হইয়া তাহার কথা পড়িবে। এমন উপদেশ যে সে দিতে পারে না। তাই যুধিষ্ঠির উপদেশ লইতে আসিলে নারদ তাঁহাকে বলিয়াছিলেন, “এই মহাত্মা ধর্মের সকল সংবাদ জানেন, ইনি বাঁচিয়া থাকিতে তাহা শুনিয়া লও৷”


অনুশাসনপর্ব

অশেষ উপদেশ দ্বারা যুধিষ্ঠিরের মনের সকল সংশয় দূর করিয়া ভীষ্মদেব চুপ করিলে, চারিদিকের লোকেরা অনেকক্ষণ পর্যন্ত ছবির ন্যায় স্থির এবং নিঃশব্দ হইয়া রহিল। তারপর যুধিষ্ঠির তাঁহার পায়ের ধূলা ও আশীর্বাদ লইয়া,হস্তিনায় ফিরিলেন। বিদায়কালে ভীষ্ম তাঁহাকে বলিলেন, “সূর্যদেবের উত্তরায়ণ আরম্ভ হইলে আমার নিকট আসিও।”

 তারপর কিছুদিন গেলে, যুধিষ্ঠির দেখিলেন যে, মাঘ মাসের শুক্লপক্ষ আসিয়াছে। ইহাই সূর্যের রয়ে উত্তরায়ণের সময়, এইসময়েই ভীষ্মদেবের স্বর্গারোহণ করিবার কথা। সুতরাং তিনি অবিলম্বে পুরোহিত, পুরজন প্রভৃতি সকলকে সঙ্গে লইয়া রত্ন, ঘৃত, গন্ধদ্রব্য, পট্টবস্ত্র, চন্দনাদিসহ কুরুক্ষেত্রে