পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৩৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

মৌসলপর্ব

রপর আঠারো বৎসর চলিয়া গেল৷ যুধিষ্ঠিরের রাজত্বের ছত্রিশ বৎসর পূর্ণ হইলে অনেক অদ্ভুত ঘটনা ঘটে, তাহাতে তিনি বুঝিতে পারেন যে শীঘ্রই কোনো বিপদ হইবে৷

 যে বিপদ হইল, তাহা পাণ্ডবদের নহে যাদবদের (অর্থাৎকৃষ্ণ যে বংশে জন্মিয়াছে, তাঁহাদের)৷ এইরূপ একটা বিপদ যে হইবে তাহা কৃষ্ণ আগেই জানিতেন, কিন্তু এমনি হওয়া আবশ্যক বুঝিয়া তিনি তাহাতে ব্যস্ত নাই৷

 বিপদের কারণ অতি সামান্য৷ যদুকুলের কয়েকটি বালক একটা লৌহ মুসলের কথা লইয়া মহর্ষি বিশ্বামিত্র, কণ্ব ও নারদকে উপহাস কবে৷ ইহাতে তাঁহার বিষম ক্রোধভরে এই দারুণ শাপ দেন, “এই মুসলের দ্বারাই, কৃষ্ণ আর বলরাম ভিন্ন তোমাদের বংশের সকলে নষ্ট হইবে৷”

 কৃষ্ণ জানিতেন যে এইরূপ হইবে এবং হওয়া আবশ্যক সুতরাং তিনি আর এই বিপদ নিবারণের কোনো চেষ্টা করিলেন না৷ মুসলটিকে চূর্ণ করিয়া সমুদ্রে ফেলিয়া দেওয়া হইল৷ যাদবদিগের মধ্যে অনেকে মদ খাইত৷ পাছে এইসকল লোক মাতাল হইয়া কোনো একটা কিছু বিপদ ঘটায়, এজন্য তখন হইতেই মদ্যপানও বন্ধ করিয়া দেওয়া হইল৷ আশা ছিল, ইহাতে লোকের চরিত্র ভালো হইবে কিন্তু ফল হইল ঠিক ইহার বিপরীত৷

 এই সময়ে একদিন যাদবেরা সকলে প্রভাস তীর্থে যায়৷ তাহারা মনে করিয়াছিল যে, সেখানে গিয়া খুব আমোদ-প্রমোণ করিবে, সুতরাং তাহার আয়োজন সঙ্গে লইতে ভুলিল না৷ দুঃখের বিষয় এই যে, এত নিষেধ সত্ত্বেও তাহারা সেই আয়োজনের সঙ্গে মদও লইল, সেই মদে যে কি সর্বনাশ হইল, তাহার কথা শুন৷

 প্রভাস তীর্থে গিয়া বলরাম, সাত্যকি, কৃতবর্মা প্রভৃতি সকলে কৃষ্ণের সম্মুখেই সুরাপান করিতে লাগিলেন৷ ইহার পর তাঁহারা মাতাল হইয়া ঝগড়া আরম্ভ করিবেন, তাহা বিচিত্র কি? তখন সাত্যকি কৃতবর্মাকে বলিলেন, “তুই বড় নির্দয় লোক! ঘুমের ভিতরে লোককে মারিতে গিয়াছিলি!”

 ইহাতে কৃতবর্মা চটিয়া বলিলেন, “তুই তো ভূরিশ্রবার মাথা কাটিয়াছিল৷ তোর মতো নির্দয় কে আছে?”

 এইরূপে কথায় কথায় বিবাদ আরম্ভ হইয়া, শেষে তাহা বড়ই সাংঘাতিক হইয়া দাঁড়াইল৷ সাত্যকি কৃতবর্মার মাথা কাটিয়া ফেলিলেন, তাহতে কৃতবর্মার পক্ষের লোকেরা, তাহাদের নিজ নিজ থালা হাতেই সাত্যকিকে আক্রমণ করিলেন৷ তখন কৃষ্ণের পুত্র প্রদ্যুম্ন আসিয়া সাত্যকির সাহায্য করিতে লাগিলেন৷