পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৩৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৩৯৩

না; এখন তুই কি নিবি বল্।

 কেনা। তা দাদা, যদি দেবে তবে এমন একখানা বেহালা দাও যে, যে তার আওয়াজ শুনবে তাকেই তিড়িং তিড়িং করে নাচতে হবে।

 দূত। (ঝুলি হইতে বেহালা বাহির করিয়া)। এই নে।

 কেনা। বাঃ। বেশ হল, আমাকে ত সঙ্গে সঙ্গে নাচতে হবে না?

 দূত। না, সে ভয় তোর নেই, যা এখন ফুর্তি করগে। (দূতের প্রস্থানোদ্যম ও কেনারামের বাদ্যোদ্যম) আরে দূর হতভাগা, আমারই উপর পরীক্ষা করে বসলি।

 কেনা। তুমিই যে ফুর্তি করতে বললে দাদা!

 দূত। আমি আগে যাই, তাবপর করিস।

 কেনা। আ — চ্ছা।

তৃতীয় দৃশ্য

(বেচারামের প্রবেশ)

 বেচা। ঐ ঝোপটাতে ফেলে গিছলুম। পুলিশ বেটা এমনি তাড়া কল্লে ধরেই ফেলেছিল আর কি চট করে টাকার থলেটি ঐ ঝোপটাতে ফেলে পালালুম, এখন পেলে বাঁচি। (থলি খুঁজতে ঝোপে প্রবেশ) বাপ রে, কি ভয়ানক কাঁটা—এই পেয়েছি!

(কেনারামের প্রবেশ)

 কেনা (স্বগত)। ঐ যে বেচুবাবু কাঁটাবনে ঢুকেছেন, এইবারে এক গৎ বাজিয়ে নি, পুরোনা মনিবটে। (বেহালাবাদন)

 বেচা (নৃত্য করিতে করিতে)। আরে! আরে। ও কী? উঃ আঃ! আরে তুমি কি—উঃ হু হু —আরে আর না—জামাটা-উঃ—হু জামাটা গেল যে, উঃ-গায়ের চামড়াও যে ছিঁড়ে গেল— উঃ!

 কেনা। আজ্ঞে, আমি আপনার বকেয়া চাক্র কেনারাম, মাইনে চুকিয়ে দিয়েছেন বলে কি এমন মনিবকে ভুলতে পাবি? আপনাকে বাজনা শুনিয়ে আমার বেয়ালা সার্থক হল। (পুনরায় দ্বিগুণ উৎসাহে বাদন)

 বেচা (নৃত্য)! কি মুশকিল। বাবা কেনারাম, রক্ষে করো বাবা। এ কি বাজনা যে শুনলেই নাচতে হয়! বাবা আর কাজ নেই, আমি খুব খুশি হয়েছি, এই টাকার থলি তোমায় দিচ্ছি, তোমার মাইনে এ থেকে পুষিয়ে নাও, দোহাই বাবা, আমায় নাচিও না। (টাকার থলি কেনারামের হাতে প্রদান।)

 কেনা (বিনীত অভিবাদন করিয়া)। আজ্ঞে, না হবে কেন? আপনার মত মনিব না হলে গুণ কে বোঝে! দেখছি বেয়ালার আওয়াজে আপনার ‘কানে খাট’র ব্যারামটাও বেশ সেরে গেল। ভাল ভাল, আর এ ব্যারামের সুত্রপাত দেখলে আমায় খবর দেবেন, আমি বেয়ালা নিয়ে এসে চিকিৎসা করব। (দীর্ঘ অভিবাদন করিয়া প্রস্থান)

 বেচা। হতভাগা বেটা, লক্ষ্মীছাড়া বেটা, জোচ্চর, বাটপাড়, ডাকাত-বেটাকে দেখাচ্ছি। পুলিশ! পুলিশ! চোর—চোর!