পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪০১

ঢের দূর—তুই আমার ঘোড়াটা নিয়ে ছোট শিগগির। ঘোড়ায় চড়ে চাকর তখন ডাক্তারের বাড়ি ছুটল।

 জমিদারমশাই হোঁচট খেতে খেতে বাড়ি এসে উপস্থিত। বাড়ি এসে দেখলেন সাড়া শব্দ কিছু নেই, সব চুপচাপ। ব্যস্ত সমস্ত হয়ে বাড়ির ভেতর গেলেন, সেখানে বসবার ঘরে গিন্নি আর মেয়ে দিব্যি আরাম করে বসে আছেন। ততক্ষণে জমিদারমশায়ের চৈতন্য হল। তিনি বুঝতে পারলেন এ-সব চানু বেটারই চালাকি-বেটা তাকে আচ্ছা ঘোল খাইয়েছে।

 খানিক পরেই দেখলেন, চানু তাঁর ঘোড়ায় চড়ে বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছে। সেই চাকর বেটার কিন্তু আর কোন উদ্দেশ পাওয়া গেল না। চাকর তার জন্য একটুও কেয়ার করে না, নাইবা করল তার চাকরি—চানু যে তাকে দশটা মোহর দিয়েছিল তা দিয়ে তার অনেক দিন চলবে।

 পরের দিন চানু এসে জমিদার বাড়ি উপস্থিত, জমিদার বললেন, ‘তুমি বাপু এবারে নেহাত ফাঁকি দিয়াছ, ওতে তোমার উপর আমার বড্ড রাগ হয়েছে। যা হোক আজ রাত্তিরে যদি আমাদের বিছানার থেকে চাদরখানা চুরি করতে পার তা হলে কালকেই বিয়ের আয়োজন করব।’

 চানু বলল, ‘আজ্ঞে আচ্ছা, একবার চেষ্টা কবে দেখব, কিন্তু এবারেও যদি ফাঁকি দেন তাহলে কিন্তু আপনার মেয়েকেই চুরি করে নিয়ে যাব।’

 রাত্রে জমিদার আর তাঁর গিন্নি শুয়েছেন, দিব্যি জ্যোৎস্না, কাঁচের জানালার ভিতর দিয়ে চাঁদের আলো এসে ঘরে পড়েছে। জমিদারমশায় দেখলেন হঠাৎ যেন একটা মাথা জানালা দিয়ে উঁকি মেরে দেখতে যাচ্ছিল; তাঁদের দেখতে পেয়েই আবার সরে পড়ল।

 জমিদার গিন্নিকে বললেন—‘দেখলে ত? এ বেটা নিশ্চয় চানু। তারপর বন্দুকটা হাতে করে নিয়ে বললেন, ‘দেখো, আমি বেটাকে এখনি চমকে দিচ্ছি।’ বন্দুক দেখেই জমিদার গিন্নি ব্যস্ত হয়ে বললেন, ‘কর কি, চানুকে গুলি করবে না কি?’

 জমিদার বললেন, ‘আরে না, তুমি কি পাগল হলে নাকি? বন্দুকে কি আর গুলি পুরেছি শুধু বারুদ।’

 খানিক পরেই আবার জানালায় মাথা উঁকি মারল, দড়াম করে জমিদার বন্দুক ছুঁড়ে দিলেন সঙ্গে সঙ্গে শুনতে পেলেন ধপ করে কি নীচে পড়ে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লেগেছে।

 জমিদার গিন্নি চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘হায় ভগবান, বেচারি বোধ করি মরে গেছে, আর নাহয় জন্মের মত খোঁড়া কানা হয়ে থাকবে।’

 জমিদার মশায় বোধ করি তখনো বাইরের জানালার কাছে পৌঁছান নি, কিন্তু গিন্নিঠাকরুন শুনলেন কর্তা ফিরে এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলেছেন, শিগগির বিছানার চাদরখানা দাও, বেটা মরে নি বোধ হয়, কিন্তু বেজায় রক্ত পড়ছে—একটু পরিষ্কার করে বেঁধে ঠেঁধে ওকে নিয়ে আসব।

 গিন্নিঠাকরুন একটানে চাদরখানা বিছানা থেকে তুলে দরজায় ছুঁড়ে দিলেন। চাদর নিয়ে জমিদার মশায় আবার ছুটলেন, কিন্তু কি আশ্চর্য সেই মুহূর্তেই তিনি ফিরে এসে ঘরে উপস্থিত-সে সময়ের মধ্যে বাগানে জানালার কাছে গিয়ে ফিরে আসা একেবারে অসম্ভব।