পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪১৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪১৫

নিয়ে মাছ ত ধরলেন খুবই, লাভের মধ্যে বঁড়শিটা মাছে ছিঁড়ে নিয়ে গেল।

 তারপর একদিন দীপ্তানল বললেন, ‘ভাই, শখ কি মিটেছে? এখন কেন আমার বঁড়শি আর আমাকে ফিরিয়ে দাও না।’ তাতে তৃপ্তানল ভারি লজ্জিত হয়ে বললেন, ‘দাদা, বঁড়শি ত মাছে নিয়ে গেছে এখন কি করে দিই?’ এ কথায় দীপ্তানল যার পর নাই রেগে বলললেন, ‘সে আমি জানি না, আমার বঁড়শি আমাকে এনে দাও।’

 তখন তৃপ্তানল আর কি করেন, নিজে তলোয়ারখানা ভেঙে টুকরো টুকরো করে তাই দিয়ে বঁড়শি বানিয়ে দাদাকে দিলেন। কিন্তু দাদার তাতে মন উঠল না, তিনি বললেন, ‘ও আমি চাই না, আমার বঁড়শি নিয়েছ তাই এনে আমাকে দাও।’

 তৃপ্তানল হাজার বঁড়শি এনে দীপ্তানলকে দিতে গেলেন, তাতেও হল না। দীপ্তানল আরো রেগে গিয়ে বললেন, ‘আমার সেই বঁড়শিটি আমাকে এনে দিতে হবে।’ তা শুনে তৃপ্তানল মাথা হেঁট করে চোখের জল ফেলতে ফেলতে সেখান থেকে চলে গেলেন। ভাবলেন, ‘হায় হায়! এখন আমি কি করি? সমুদ্রের মাছে বঁড়শি নিয়ে গেছে, তাকে আমি কোথায় খুঁজে পাব?’

 এই কথা ভাবতে ভাবতে তিনি সমুদ্রের ধারে গিয়ে বসে কাঁদছেন, এমন সময় সমুদ্রের দেবতা লবণেশ্বর সেইখানে এসে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তোমার কি হয়েছে বাছা তুমি কাঁদছ কেন?’ তৃপ্তানল বললেন, ‘দাদার বঁড়শি নিয়ে মাছ ধবতে এসেছিলাম, সেটা মাছে নিয়ে গেছে। তাতে দাদা বড্ড রাগ করেছেন। আমি আরো কত কাঁটা তাঁকে দিতে গেলাম, তিনি নিলেন না, বললেন, আমার সেইটে এনে দাও। এখন আমি কি করি?’ লবণেশ্বর বললেন, ‘তুমি কেঁদো না, আমি যা বলছি তাই করো।’ বলে, তিনি তখনি একখানা নৌকা তয়ের করে তৃপ্তানলকে তাতে বসিয়ে দিলেন, আর বললেন, এই নৌকায় চড়ে তুমি এই এই পথ দিয়ে যেতে থাকবে। খানিক দূর গিয়ে মাছের আঁশ দিয়ে গড়া একটা বাড়ি দেখতে পাবে, সেইখানে সমুদ্রের রাজা সিন্ধুপতি থাকে। সেই বাড়ির পাশে, বাগানের ভিতরে, কুয়োর ধারে একটা গাছ আছে, তার আগায় উঠে তুমি বসে থাকবে। সেই বাগানে রাজার মেয়ে বেড়াতে আসে, সে তোমাকে তোমার বঁড়শির কথা বলে দেবে।’

 এ কথায় তৃপ্তানল সেই নৌকা বেয়ে, সেই রাজার বাড়িতে গিয়ে সেই গাছে উঠে বসে রইলেন। খানিক বাদে রাজার মেয়ের দাসীরা কলসী হাতে করে সেই কুয়ো থেকে জল নিতে এল। এসে তারা দেখল যে গাছের উপবে কেমন সুন্দর একটি রাজপুত্র বসে আছে। তৃপ্তানল তাদের বললেন, হ্যাঁ গা, তোমরা দয়া করে আমাকে একটু জল খেতে দেবে? দাসীরা অমনি সোনার গেলাসে জল এনে তাঁকে খেতে দিল। তিনি তা থেকে একটুখানি জল খেলেন। তারপর গেলাস ফিবিয়ে দেবার সময়ে নিজের গলা থেকে মণি খুলে তাব ভিতর ফেলে দিলেন। দাসীরা তা দেখতে পায়নি, তারা সেই মণিসুদ্ধ গেলাস নিয়ে রাজার মেয়ের ঘরে রেখে দিয়েছে।

 তারপর রাজার মেয়ে জল খাবার জন্য গেলাস খুঁজতে এসে বললেন,—‘এ কি? গেলাসের ভিতর মণি কোত্থেকে এল রে?’ দাসীরা বলল, ‘তা ত আমরা জানি না, কুয়ো ধারে একটি রাজপুত্র বসে আছে। সে আমাদের কাছে জল খেতে চাইল, আমরা এই গেলাসে করে নিয়ে তাকে জল খেতে দিলাম। মণি হয়ত তারই হবে।’