পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪২১

ঢুকলে আব বেরোবার হুকুম নেই। শয়তান বেচারার খালি ছটফটিই সার হল, সে আর থলের ভিতর থেকে বেরুতে পারল না। ততক্ষণে কামার সেই থলেটি তার নেহাইয়ের উপর রেখে গিন্নীকে ডেকে দুজনে দুই প্রকাণ্ড হাতুড়ি নিয়ে, দমাদ্দম দমাদ্দম এমনি পিটুনি জুড়ল যে পিটুনি যাকে বলে। পিটুনি খেয়ে শয়তান খানিক খুব চেঁচাল। তাবপর যখন আর চেঁচানি আসে না, তখন গোঙাতে গোঙাতে বলল, ‘ছেড়ে দাও দাদা, তোমাব পায়ে পড়ি। এবার তোমাকে বিশাল বিশাল ছয় থলে ভরা মোহর দেব, আর -আর কখনো তোমার কাছে আসব না।’

 এ কথায় কামারের গিন্নি বলল, ‘ওগো, সে হলে নেহাত মন্দ হবে না,দাও হতভাগাকে ছেড়ে।’ তখন কামার বলল, ‘কই তোর মোহবের থলে?’ বলতে বলতেই এমনি বড় বড় মোহরের থলে এসে হাজির হল যে তারা দুজনে মিলেও তার একটাকে তুলতে পারে না। তখন কামার একগাল হেসে, তার থলের মুখ খুলে দিয়ে বলল, ‘যা বেটা। ফের তোর পোড়া মুখ এখানে দেখাতে আসবি ত টের পাবি।’ ততক্ষণে শয়তান থলের ভিতর থেকে বেরিয়ে এমনি ব্যস্ত হয়ে ছুট দিল যে, কামারের সবকথা শুনতেও পেল না।

 সেই ছ’টা থলের ভিতর এতই মোহর ছিল যে, কামার হাজাব ধুমধাম করেও তা শেষ করতে পারল না। চার থলে ভাল করে ফুরুতে না ফুরুতেই সে বুড়ো হয়ে শেষে একদিন মরে গেল। মরে গিয়ে ভূত হয়ে সে ভাবল যে এখন ত হয় স্বর্গে না হয় নরকে দুটোর একটায় যেতে হবে। আগে স্বর্গের দিকে গিয়েই দেখি, যদি কোনোমতে সেখানে ঢুকতে পারি।

 স্বর্গের ফটকের সামনে গিয়ে তার সেই দেবতাটির সঙ্গে দেখা হল, যিনি তাকে সেই তিনটি বর দিয়েছিলেন। তাঁকে দেখে কামার ভারি খুশি হযে ভাবল, ‘এই ঠাকুরটি না আমাকে সেই চমৎকার বরগুলো দিয়েছিলেন? ইনি অবশ্যি আমাকে ঢুকতেও দেবেন।’

 কিন্তু দেবতা তাকে দেখেই যার পর নাই রেগে বললেন, ‘এখানে এসেছিস্ কি করতে পালা হতভাগা, শিগগির পালা।’

 কাজেই তখন বেচারা আর কি করে? সে সেখান থেকে ফিরে নরকের দিকে চলল। সেখানকার ফটকের সামনে উপস্থিত হলে শয়তানের দরোয়ানেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল, ‘তোমার নাম?’

 কামার তার নাম বলতেই পাঁচ-ছয়টা দরোয়ান ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গিয়ে শয়তানকে বলল, ‘মহারাজ! সেই কামার এসেছে।’ তা শুনে শয়তান বিষম চমকে গিয়ে একটা লাফ যে দিল। তারপর পাগলের মত ফটকের কাছে ছুটে এসে দরোয়ানদের বলল, ‘শিগ্‌গির দরজা বন্ধ কর। আঁট হুড়কো। লাগা তালা। খবরদার। ও বেটাকে ঢুকতে দিবি না।’ ও এলে আর কি আমাদের রক্ষা থাকবে।’

 শয়তানের গলা শুনে কামার গরাদের ভিতর দিয়ে উকি মেরে হাসতে হাসতে বলল, ‘কি দাদা কি খবর?’ সে কথা শেষ না হতেই শয়তান এক লাফে এসে এমনি তার নাক মলে দিল যে কি বলব! কামার তখনই সেখান থেকে চেঁচাতে চেঁচাতে ছুটে পালাল, কিন্তু তার আগেই তার নাকে আগুন ধরে গিয়েছিল। সে আগুন আজও নেবে নি। কামার তার জ্বালায় অস্থির হয়ে জলায় জলায় নাক ডুবিয়ে বেড়ায়। লোকে সেই আগুন দেখতে পেলে বলে, ‘ঐ আলেয়া।’