পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 দুই রাজায় যখন দেখা হল, তখন শুণ্ডীর রাজা বুঝতে পারলেন যে তাঁকে ধরে এনেছে। হাল্লা জয় করা ত তাঁর ভাগ্যে ঘটলই না, এখন প্রাণটিও যাবে। কিন্তু হাল্লার রাজা তাঁকে প্রাণে না মেরে শুধু তাঁর রাজ্যই কেড়ে নিলেন। তারপর তিনি গুপি আর বাঘাকে বললেন, ‘তোমরাই আমাকে বাঁচিয়েছ, নইলে হয়ত আমার রাজ্যও যেত, প্রাণও যেত। আমি আর তোমাদের কি উপকার করতে পারি? শুণ্ডীর রাজ্যের অর্ধেক আর আমার দুটি কন্যা তোমাদের দুজনকে দান করলাম।’

 তখন খুবই একটা ধুমধাম হল। গুপি আর বাঘা হাল্লার রাজার জামাই হয়ে আর শুণ্ডীর অর্ধেক রাজ্য পেয়ে পরম আনন্দে সঙ্গীত চর্চা করতে লাগল। গুপির মা-বাপের মান্য আর সুখ তখন দেখে কে?

লাল সুতো আর নীল সুতো

 এক জোলা একদিন তাহার স্ত্রীকে বলিল, ‘আমি পায়েস খাব, পায়েস রেঁধে দাও।’ জোলার স্ত্রী বলিল, ‘ঘরে কাঠ নেই, কাঠ এনে দাও, পায়েস রেঁধে দিচ্ছি।’ জোলা কাঠ আনিতে গেল।

 পথের ধারে একটা বড় আম গাছ ছিল, তাহার একটু শুক্‌নো ডালের আগায় বসিয়া জোলা তাহারই গোড়ার দিকটা কাটিতেছে। তাহা দেখিয়া পথের লোক একজন ডাকিয়া বলল, ‘ওহে ও ডাল কেটো না, কাটলে পড়ে যাবে।’ জোলা বিবক্ত হইয়া বলিল, ‘তুমি গুনতে জানো নাকি? ও ডাল কাটলে পড়ে যাব, তা তুমি কি ক’রে জানলে? আমি পায়েস খাব না বুঝি!’ পথের লোক আর কিছু না বলিয়া চলিয়া গেল। আর, খানিক পরে জোলাও ডালসুদ্ধ পড়িয়া গেল।

 গাছ হইতে পড়িয়াই জোলা ভাবিল, ‘তাই ত! আমি প’ড়ে যাব, তা ও জানলে কি করে? ও নিশ্চয় একটা কেউ হবে।’ এই ভাবিয়া জেলা ছুটিয়া গিয়া সেই পথিকের পা জড়াইয়া ধরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ‘প্রভু আপনি কে? আমি কবে মরব, সেটি আমাকে ব’লে দিন। পথিক ভারি মুশকিলেই পড়িল। জোলার খুব বিশ্বাস হইয়াছে যে, এ পথিক সামান্য পথিক নয়;সুতরাং তাহার প্রশ্নের উত্তর না পাইলে তাহাকে কিছুতেই ছাড়িতেছে না। শেষটা পথিক যখন দেখিল যে, একটা কিছু না বললে তাহার আর ঘরে যাওয়া হইতেছে না, তখন সে রাগিয়া বলিল, ‘তোর পেটের ভিতর থেকে লাল সুতো আর নীল সুতো যখন বেরুবে, তখন তুই মরবি।’ এই কথায় জোলা সন্তুষ্ট হইয়া বাড়ি ফিরিল।

 এখন হইতে জোলা ঠিক হইয়া বসিয়া আছে যে, লাল সূতা আর নীল সূতা বাহির হইলেই তাহার মৃত্যু। সুতরাং সে রোজ পরীক্ষা করিয়া দেখে, তাহা বাহির হইল কি না। এইরূপ পরীক্ষা করিতে গিয়া একদিন সত্য সত্যই তাহার কাপড়ে একখণ্ড লাল সূতা আর একখণ্ড নীল সূতা পাইল। আর, অমনি সে চিৎকার করিয়া তাহার স্ত্রীকে বলিল, ‘ওগো শিগ্‌গির এস, আমি মরে গিয়েছি—আমার লাল সুতো নীল সুতো বেরিয়েছে।’ তাহার স্ত্রী আসিয়া দেখিল, সত্য সত্যই লাল সূতা আর নীল সূতা। তখন সে বেচারা কি করে,