পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৩৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 চোরেরা বলিল, ‘দূর বোকা! ওটা ঘর নয়, মশারি। ওটাকে তুলে দেখলি না কেন?’ জোলা আবার ঘরের ভিতরে গেল।

 এবার জোলা মশারি তুলিতে অনেক চেষ্টা করিল, কিন্তু সেটাকে নাড়িতেও পারিল না—কারণ সে খাটসুদ্ধ ধরিয়া টানাটানি করিয়াছিল। সে আবার ফিরিয়া আসিয়া বলিল, ‘না ভাই, ওটা বড্ড ভারি।’

 ‘আরে এমন গাধাও আর দেখি নি! তুই বুঝি খাটসুদ্ধ তুলতে গিয়েছিল? শুধু ওর কাপড়টা টানতে হয়।’

 এবারে জোলা আর কোন ভুল করিল না। মশারির কাপড় ধরিয়া টানিতেই সেটা উঠিয়া আসিল। ভিতরে খুব উঁচু গদির উপরে রাজা শুইয়া আছেন, তাঁহার গায়ে ঝালর-দেওয়া অতিশয় পুরু লেপ। দেখিয়া জোলার মনে ভারি দুঃখ হইল। সে ভাবিল, বুঝি রাজাকে গোর দিয়েছে। তারপর দেখিল, মুখখানি জাগিতেছে! তখন সে ভাবিল যে, ‘ঠিক ত আমারই মতন করেছে দেখছি! এরও লাল সুতো নীল সুতো বেরিয়েছিল নাকি?’ জোলা যত ভাবে, ততই আশ্চর্য হয়, আর ততই তাহার জানিতে ইচ্ছা করে, রাজা মহাশয়েরও লাল সূতা নীল সূতা বাহির হইয়াছিল কি না। শেষটা এমন হইল যে, এই খবরটা তাহার না জানিলেই নয়। সুতরাং সে রাজাকে ঠেলিয়া জাগাইল। আর, তিনি চোখ মেলিবামাত্রই, জিজ্ঞাসা করিল ‘লাল সুতো নীল সুতো বেরিয়েছিল?’

 ইহার পর একটা মস্ত গোলমাল হইল। রাজবাড়ির সকলে জাগিয়া গেল, সাত চোর ধরা পড়িল, তাহার সঙ্গে সঙ্গে জোলাও ধরা পড়িল।

 পরদিন বিচারে সাত চোরের উচিত সাজা হইল। আর জোলাকে পেট ভরিয়া উত্তম উত্তম পায়েস খাওয়াইয়া বিদায় দেওয়া হইল।

দুষ্ট দানব

 এক দানব আর এক চাষা, দুজনে পাশা খেলছিল। খেলায় চাষার হার হল।

 পাশায় হেরে চাষা হায় হায় করতে লাগল। খেলবার আগে সে বাজি রেখেছিল যে, সে হারলে দানব তার ছেলেটিকে নিয়ে যাবে। এখন উপায় কি হবে? দানব কিছুতেই ছাড়বে না; সে বলছে, ‘কালই এসে আমি ছেলে নিয়ে যাব। যদি তাকে রাখতে চাও, তবে এমন করে তাকে লুকিয়ে রেখে দাও যাতে আমি খুঁজে বার না করতে পারি। খুঁজে পেলে কিন্তু আর তাকে ফেলে যাব না।’

 হায়, কি বিপদ! ছেলেটিকে কোথায় লুকোবে? যেখানেই রাখুক, দানব নিশ্চয় তাকে খুঁজে বার করবে। চাষা ভেবে কিছু বুঝতে না পেরে শেষে দেবতার রাজাকে ডাকতে লাগল। দেবতার রাজা তার দুঃখ দেখে দয়া করে বললেন, ‘তোমার কোনো চিন্তা নেই আমি তোমার ছেলেটিকে এমন করে লুকিয়ে দেব যে দানবের বাবাও তাকে খুঁজে বার করতে পারবে না।’

 এই বলে তিনি ছেলেটিকে গমের ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে তাকে একটা ছোট্ট গমের ভিতরে