পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
গল্পমালা
৪৬৯

দাঁড়াইতে বলিতে লাগিল। তাঁহাদের শব্দ শুনিয়া কুকুরগুলি খেউ খেউ করিয়া উঠিল। কুকুরের গোলমালে গাঁয়ের লোক জাগিল! সকলেই জিজ্ঞাসা করে ব্যাপারখানা কি?

 ‘এই সময়ে মাস্টারমহাশয় জলার মধ্য দিয়া দৌড়িতেছেন। মাথা ঘুরিয়া গিয়াছে— কেবল পুলিস—মাজিস্ট্রেট—জুরী ইত্যাদি ভয়ানক বিষয় মনে হইতেছে। তাঁহার লণ্ঠনের আলো দেখিয়া অন্যেরা তাঁহার পশ্চাৎ আসিতেছে।

 সকলে তাঁহার কাছে আসিয়া তাঁহাকে ধরিল এবং ইহার কারণ জিজ্ঞাসা করিতে লাগিল। মাস্টারমহাশয়ের উত্তর দিবার পূর্বেই সেই মাঠের মধ্যে হইতে গালি এবং কোঁকানি মিশ্রিত একপ্রকার শব্দ শুনা যাইতে লাগিল। কতদূর গিয়া দেখা গেল একটা লোক জলার ধারে বসিয়া আছে। লণ্ঠনের সাহায্যে নির্ধারিত হইল যে এ আর কেহ নহে, আমাদের সেই মুচি। সেইখানে বেচারা দুই হাতে মাথা চাপিয়া বসিয়া আছে আর তাহাদের মাস্টারের উদ্দেশ্যে গালাগালি দিতেছে। তাহার নিকট হইতে সকলে সমস্ত ঘটনা শুনিল।

 ‘শেষে অনুসন্ধানে জানা গেল যে ঐ বাড়ির জানালার ঠিক সম্মুখে একটা ছোট গাছ ছিল। তাহারই ছায়া চন্দ্রের আলোকে দেয়ালে পড়িত। আশ্চর্যের বিষয় এই যে সেই ছায়ার আকৃতি দেখিতে ঠিক ক্যামেরণের মুখের মত। সেদিন চন্দ্র ছিল না বলিয়াই মাস্টারমহাশয় সেই ছায়া দেখিতে পান নাই।’

সাগর কেন লোনা?

 এক যে ছিল রাজা, তার নাম ফ্রদি। তার ছিল একটা যাঁতা, তাকে বলত গ্রত্তি। সে যাঁতা যেমন তেমন যাঁতা ছিল না, তাকে ঘুরিয়ে যে জিনিস ইচ্ছা তাই তার ভিতর থেকে বার করা যেত।

 কিন্তু ঘোরাবে কে? সে যাঁতা ছিল পাহাড়ের মত বড়। রাজার চাকরেরা সেটা নাড়তেই পারল না। রাজার দেশে যত জোয়ান ছিল, সকলে হার মেনে গেল, সে যাঁতা কিছুতেই ঘুরবার নয়।

 রাজার মনে দুঃখ। ভেবেছিলেন যাঁতা ঘুরিয়ে কত হীরা-মাণিক বার করে নেবেন। কিন্তু, হায়! যাঁতা আর ঘুরল না!

 এমনি করে দিন যায়। তারপর একবার বিদেশে গিয়ে তিনি দুটি দানবের মেয়েকে দেখতে পেলেন। তারা দুটি বোন। একজনের নাম মেনিয়া আর একজনের নাম ফেনিয়া। তারা চলতে গেলে মাটি কাঁপে, বসতে গেলে গর্ত হয়ে যায়। তাদের দেখে রাজা ভাবলেন—‘এইবার আমার যাঁতা ঠেলবার লোক জুটেছে।

 তখন রাজা খুশি হয়ে মেনিয়া-ফেনিয়াকে কিনে নিয়ে দেশে ফিরে এলেন। এসেই তাদের দুজনকে যাঁতার কাছে নিয়ে গিয়ে বললেন ‘ঠেল, ঠেল, ঠেল! সোনা বেরোক, রূপা বেরোক, ঠেল, ঠেল!’

 মেনিয়া আর ফেনিয়া যাঁতা ঠেলতে লাগল আর গাইতে লাগলঃ—