পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৪৮৩

 নারায়ণকে দেখিয়াই দানবেরা বলিল, “ঐ সেই সাদা বেটা (নারায়ণের দেহ শ্বেতবর্ণ ছিল) ঘুমাইতেছে। বেদ চুরি করা উহারই কাজ।”

 এই বলিয়া তাহারা নারায়ণের কাছে আসিয়া আবার ঘোরতর শব্দে বলিতে লাগিল, “এ বেটা কে রে? বেটা ঘুমাইতেছে কেন?”

 ইহাতে নারায়ণের ঘুম ভাঙ্গিয়া গেল, তিনি চাহিয়া দেখিলেন যে, দুই দানব মিলিয়া তাঁহাকে আক্রমণ করিবার আয়োজন করিতেছে। সুতরাং তখন তিনিও তাহাদিগকে আক্রমণ করিলেন, আর দেখিতে দেখিতে দুই দানবের প্রাণও বাহির হইয়া গেল।

 তবেই দেখা যাইতেছে যে, সৃষ্টির গোড়া হইতেই দেবতা আর অসুরের শত্রুতা। এই অসুরদের হাতে দেবতারা যে কত লাঞ্ছনা ভোগ করিয়াছে তাহা বলিয়া শেষ করা যায় না। অসুরগুলি স্বভাবতই বেজায় ষণ্ডা ছিল। তাহাদের চেহারা অতি ভয়ঙ্কর আর দেহগুলি পাহাড় পর্বতের মত বড় হইত। ইহার উপর আবার বড় বড় দেবতাদিগকে নিতান্ত ভালো মানুষ পাইয়া, উহারা সহজেই তাঁহাদিগকে তপস্যায় তুষ্ট করিয়া ফেলিত। তুষ্ট হইলেই তাঁহারা তাহাদিগকে তাহাদের ইচ্ছামত বর দিতেন। এমনি করিয়া এক একটা অসুর বড়ই ভয়ানক হইয়া উঠিত। সুন্দ আর উপসন্দ নামক দুইটি দানব, এইরূপে ব্রহ্মার নিকট বর পাইয়া, কি কম কাণ্ড করিয়াছিল?


সুন্দ ও উপসুন্দের কথা

 সুন্দ আর উপসুন্দ, দুই ভাই, হিরণ্যকশিপুর বংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছিল। দুই ভাই মিলিয়া যুক্তি করিল যে, ব্রহ্মার নিকট বর লইয়া, ত্রিভুবন জয় করিতে হইবে।

 এইরূপ পরামর্শ করিয়া, তাহারা বিন্ধ্য পর্বতে গিয়া এমনি ভয়ঙ্কর তপস্যা আরম্ভ করিল যে, তাহাতে দেবতারা পর্যন্ত ভয়ে অস্থির হইয়া উঠিলেন। ইহাদের তপস্যা ভাঙ্গিবার জন্য তাঁহারা অনেক চেষ্টা করিলেন, কিন্তু তাহাতে কোন ফল হইল না। তাহারা খালি বাতাস খাইয়া, কেবল পায়ের বুড়ো আঙুলের ভরে খাড়া থাকিয়া, চোখের পলক না ফেলিয়া, একমনে তপস্যাই করিতে লাগিল। তপস্যার তেজে বিন্ধ্য পর্বতে আগুন ধরিয়া গেল।

 কাজেই তখন ব্রহ্মা আর তাহাদের নিকট না আসিয়া থাকিতে পারিলেন না। ব্রহ্মা জিজ্ঞাসা করিলেন—

 “তোমরা কি বর চাহ?”

 সুন্দ ও উপসুন্দ বলিল, “আমরা এই বর চাহি যে, আমরা সকলরকম মায়া জানিব, যেমন ইচ্ছা তেমনি চেহারা করিতে পারিব, যুদ্ধে সকলকেই হারাইয়া দিব, আর অমর হইব।”

 ব্রহ্ম বলিলেন, “আমি তোমাদিগকে আর সব কয়টি বর দিতেছি, কিন্তু অমর করিতে পারিব না। তোমরা যখন ত্রিভুবন জয়ের জন্য তপস্যা করিতেছ, তখন তোমাদিগকে অমর করিলে চলিবে কেন? অমর হইলে ত তোমরা দেবতাদিগের সমানই হইয়া যাইবে!”

 এ কথা শুনিয়া সুন্দ উপসুন্দ বলিল, “যদি অমর না করেন, তবে এই বর দিন যে, ত্রিভুবনের ভিতরে কেহই আমাদিগকে বধ করিতে পারিবে না। আমাদিগকে মারিবার ক্ষমতা