পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫০০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

জনের দাসী হইয়া থাকিবে।”

 এমনি করিয়া বাজি রাখা হইল, আর স্থির হইল যে, পরদিন দুইজনে মিলিয়া ঘোড়াটাকে দেখিতে যাইবেন। অবশ্য উচ্চৈঃশ্রবাঃ যে সাদা, এ কথা সকলেই জানে। কদ্রুও যে এ কথা না জানিতেন, এমন নহে। তাঁহার মনে দুষ্ট অভিসন্ধি ছিল, এজন্য তিনি জানিয়া শুনিয়াই বলিয়াছিলেন, “উচ্চৈঃশ্রবাঃর লেজ কালো।”

 বিনতার সঙ্গে বাজি বাখিয়া কদ্রু চুপি চুপি তাঁহার ছেলেদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, “বাছাসকল, আমি ত বিনতার সঙ্গে এইরকম বাজি রাখিয়া আসিয়াছি। কাল গিয়া যদি উচ্চৈঃশ্রবাঃর লেজ কালো দেখিতে না পাই, তবেই কিন্তু আমাকে পাঁচ শত বৎসর দাসী হইয়া থাকিতে হইবে। তোমরা এই বেলা গিয়া, কালো কালো সূতার মতন হইয়া উহার লেজ ধরিয়া ঝুলিতে থাক। এমনি করিয়া তাহার লেজটাকে কালো করিয়া দেওয়া চাই, নইলে আমার বড়ই বিপদ।”

 কদ্রুর কথায় দলে দলে সরু সরু কলো সাপ গিয়া উচ্চৈঃশ্রবাঃব লেজ ধরিয়া ঝুলিয়া থাকিলে, সেই লেজের রং দূর হইতে কালোই দেখা যাইতে লাগিল। কতগুলি সাপ কদ্রুর কথা মত কাজ করিতে রাজি হয় নাই। তাহাদিগকে তিনি এই বলিয়া শাপ দিলেন, “তোরা জন্মেজয় রাজার যজ্ঞের আগুনে পুড়িয়া মারা যাইবি।”

 পরদিন প্রাতঃকালে কদ্রু আর বিনতা দুজনে মিলিয়া উচ্চৈঃশ্রবাঃকে দেখিতে চলিলেন। বিনতা মনে কবিয়াছিলেন যে, তাঁহারা নিশ্চয়ই উচ্চৈঃশ্রবাঃকে সাদা রঙের দেখিতে পাইবেন। কিন্তু ঘোড়ার নিকটে গিয়া দেখিলেন যে, উহার লেজটি মিসমিসে কালো।

 তখন কদ্রু বলিলেন, “কেমন? বড় যে বলিয়াছিলে, ঘোড়াটি সাদা। দেখত উহার লেজটি কি রঙের। এখন আইস। আমার ঘর ঝাঁট দাও আসিয়া!”

 ইহাতে বিনতা নিতান্তই আশ্চর্য এবং দুঃখিত হইলেন বটে, কিন্তু বাজি যখন হারিয়াছেন, তখন ত আর কদ্রুর দাসী না হইয়া উপায় নাই! কাজেই তিনি কাঁদিতে কাঁদিতে দাসীর কাজই করিতে লাগিলেন।

 এই ঘটনার পাঁচশত বৎসর পরে বিনতার অপর ডিমটি ফুটিলে তাহার ভিতর হইতেও একটি পক্ষী বাহির হইল। এই পক্ষীটির নাম ছিল গরুড়।

 কশ্যপ হইতেই অধিকাংশ জীবের জন্ম হইয়াছিল। সুতরাং তাঁহার সন্তানেরা যে, কেহ দেবতা, কেহ অসুর, কেহ মানুষ, কেহ জানোয়ার, কেহ সাপ, আর কেহ পাখি হইবে, ইহা ত ধরা কথা! কিন্তু এই গরুড় যে পাখি হইয়াছিল, মহাভারতে তাহার একটা বিশেষ কারণের কথা আছে।


গরুড়ের কথা

 একবার মহামুনি কশ্যপ, পুত্র লাভের জন্য, খুব ঘটা করিয়া যজ্ঞ করিতেছিলেন। দেবতা এবং মুনিগণ সকলে মিলিয়া সেই যজ্ঞে কাজ করিতে আসেন।

 যজ্ঞের সকল কাজ ইঁহাদিগের মধ্যে বাঁটিয়া দেওয়া হইল। যাঁহারা কাঠ আনিবার ভার