পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫০১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫০১

লইলেন, ইন্দ্র তাঁহাদেব মধ্যে একজন। ইঁহাদেব মধ্যে বালখিল্য নামক একদল মুনিও ছিলেন।

 এই বালখিল্যদিগের মতন আশ্চর্য মুনি আর কখনো হইয়াছে কিনা সন্দেহ। দেখিতে ইঁহারা নিতান্তই ছোট ছোট ছিলেন। কত ছোট, তাহা আমি ঠিক করিয়া বলিতে পারি না। কেহ বলিয়াছেন যে, তাঁহারা ‘অঙ্গুষ্ঠ প্রমাণ’ (অর্থাৎ বুডো আঙুলের মত ছোট) ছিলেন। কিন্তু এ কথা যে একেবারে ঠিক নয়, তাহার প্রমাণ এই একটা ঘটনাতেই পাওয়া যাইতেছে—

 ইঁহাদের দলে কয়জন ছিলেন, জানি না। কিন্তু দেখা যায় যে কশ্যপ মুনির যজ্ঞের জন্য কাঠ কুড়াইতে গিয়া, তাহারা সকলে মিলিয়া অতি কষ্টে একটি পাতার বোঁটা মাত্র বহিয়া আনিতেছিলেন। তাহাও আবার, পথে এক দুর্ঘটনা হওয়াতে, তাহারা যজ্ঞ স্থানে পৌঁছাইয়া দিতে পারেন নাই।

 দুর্ঘটনাটা একটু ভারিরকমের! গরুর পায়ের দাগ পড়িয়া, পথে ছোট ছোট গর্ত হইয়াছিল, সেই গর্তগুলিতে বৃষ্টির জল দাঁড়াইয়াছিল। পাতার বোঁটা লইয়া ঠেলাঠেলি করিতে করিতে, বালখিল্য ঠাকুরেরা সেই বোঁটা সুদ্ধ সকলে, সেই গর্তের একটার ভিতর গড়াইয়া পড়িয়াছেন, তারপর আর তাহার ভিতর হইতে উঠিতে পারেন না।

 এই সময়ে ইন্দ্র পর্বত প্রমাণ কাঠের বোঝা লইয়া সেইখানে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। মুনিদিগের দুর্দশা দেখিয়া তাঁহার বড়ই আশ্চর্য বোধ হইল, আর হাসি পাইল। পিপীলিকার মতন মুনিগণকে দেখিয়া তাঁহার একেবারেই গ্রাহ্য না হওয়াতে, সেই হাসি আর তিনি থামাইতে চেষ্টা করেন নাই। ইহার উপর আবার একটু আধটু ঠাট্টাও যে না করিয়াছিলেন, এমন নহে। শেষে আবার উঁহাদিগকে ডিঙাইয়া চলিয়া আসেন।

 মুনির সম্মান ত আর শরীরের লম্বা চওড়া দিয়া হয় না তাঁহাদিগের সম্মান আর ক্ষমতা তাঁহাদের তপস্যার ভিতরে। বালখিল্যদিগের মতন তপস্বী খুব কমই ছিল। আর তাঁহাদের ক্ষমতা যে কিরূপ ছিল তাহার পরিচয়ও তাঁহারা তখনই দিলেন।

 ইন্দ্রের ব্যবহারে অত্যন্ত অপমান বোধ করিয়া, তাহারা, উহার চেয়ে অনেক বড় আর এক ইন্দ্র জন্মাইবার জন্য যজ্ঞ আরম্ভ করিলেন। এ কথা জানিবামাত্রই ইন্দ্রের ভয়ের আর সীমা নাই। তিনি তাড়াতাড়ি কশ্যপের নিকট আসিয়া বললেন, “বাবা, এখন আপনি না বাঁচাইলে, আর উপায় দেখিতেছি না।”

 ইন্দ্র কশ্যপের পুত্র (বারজন আদিত্যের মধ্যে যাঁহার নাম শুক্র তিনিই ইন্দ্র) সুতরাং পুত্রের জন্য তাঁহার দয়া না হইবে কেন? কশ্যপ ইন্দ্রের সকল কথা শুনিয়া; বালখিল্যদিগের নিকট গিয়া বলিলেন—

 “মুনিগণ, আপনাদের তপস্যা বৃদ্ধি হউক। আমি একটি কাজ করিতে ইচ্ছা করিয়াছি, আশীর্বাদ করুন, যেন অমার কাজটি হয়।”

 সত্যবাদী বালখিল্যগণ তখনই বলিলেন, “আপনার কার্যসিদ্ধ হইবে।”

 তাহা শুনিয়া কশ্যপ তাঁহাদিগকে মিষ্ট কথায় বুঝাইয়া বলিলেন যে, “দেখুন, ব্রহ্মা আমার এই পুত্রটিকে ইন্দ্র করিয়া দিয়াছেন। এখন, আপনারা যদি ইহাকে যজ্ঞ করিয়া তাড়াইয়া দেন, তাহা হইলে ত ব্রহ্মার কথা মিথ্যা হইয়া যায়। আপনাদের যজ্ঞ বৃথা হয়, ইহা কখনই আমার ইচ্ছা নহে। আপনারা যে একটি ইন্দ্র করিতে চাহিয়াছেন, তাহা হইবেই। তবে আমি এই চাহি যে সে ইন্দ্র আমাদিগের ইন্দ্র না হইয়া পাখির ইন্দ্র হউক। দেখুন, ইন্দ্র মিনতি করিতেছেন