পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫১২
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এ কথায় তক্ষক সেই বটগাছটাকে কামড়াইবামাত্র উহার শিকড় অবধি আগা পর্যন্ত তৎক্ষণাৎ পুড়িয়া ছাই হইয়া গেল। কিন্তু কাশ্যপের মন্ত্রের কি আশ্চর্য গুণ, তাহাতে মুহূর্তের মধ্যে সেই ছাই হইতে প্রথমে একটু অঙ্কুর, তারপর দুটি পাতা এইরূপ করিয়া ক্রমে সেই প্রকাণ্ড বটগাছ যেমনটি ছিল তেমনটি অবিকল হইয়া দাঁড়াইল। সে সময়ে একটি ব্রাহ্মণ কাঠের জন্য সেই গাছে উঠিয়াছিলেন, গাছের সঙ্গে তিনিও ভস্ম হইয়া যান, আবার কাশ্যপের মন্ত্রে বাঁচিয়া উঠেন!

 বটগাছ বাঁচিতে দেখিয়া, তক্ষক অতিশয় আশ্চর্য হইয়া কাশ্যপকে বলিল, “আপনার অদ্ভুত ক্ষমতা! আপনার অসাধ্য কিছুই নাই। কিন্তু আপনি কিসের জন্য পরীক্ষিৎকে বাঁচাইতে চাহিতেছেন?”

 মুনি বলিলেন, “রাজাকে বাঁচাইলে অনেক টাকা পাইব, তাই আমি তাঁহাকে বাঁচাইতে চাহিতেছি।”

 এ কথায় তক্ষক বলিল, রাজাকে বাঁচাইলে যে অনেক টাকা পাইবেন, তাহা ত বুঝিলাম, কিন্তু যদি বাঁচাইতে না পারেন, তখন কেমনটি হইবে? আপনি মুনির শাপেব সঙ্গে যুঝিতে যাইতেছেন, সে জায়গায় আপনার মন্ত্র নাও খাটিতে পারে। তাহার চেয়ে এক কাজ করুন না! আপনার টাকা পাওয়া নিয়াই ত কথা—রাজার কাছে যাহা পাইতেন, আমিই আপনাকে সেই টাকাটা দিতেছি। তাহা লইয়া আপনি ঘরে চলিয়া যাউন, আপনার অনেক পরিশ্রম বাঁচিয়া যাইবে।”

 মুনির টাকাটারই দরকার ছিল, তাহার চেয়ে ভাল উদ্দেশ্য তাঁহার ছিল না। সুতরাং তিনি তক্ষকের কথায় বিশেষ সুবিধাই বোধ করিয়া, তাহার নিকট হইতে অনেক টাকা লইয়া আহ্লাদের সহিত ঘরে ফিরিলেন।

 এদিকে তক্ষক হস্তিনায় আসিয়া যখন দেখিল যে, পরীক্ষিৎকে সোজাসুজি গিয়া কামড়াইবার কোন উপায় নাই, তখন সে ইহার এক কৌশল স্থির করিল। তক্ষকেব কথায় কতকগুলি সাপ ব্রাহ্মণ সাজিয়া ফল, ফুল, কুশ আর জল হাতে হস্তিনায় আসিয়া বলিল যে, “আমরা রাজাকে আশীর্বাদ করিতে আসিয়াছি।”

 এ সময়ে রাজার যে আশীর্বাদের নিতান্তই প্রয়োজন ছিল, তাহাতে সন্দেহ নাই। সুতরাং এই-সকল ব্রাহ্মণের তাঁহার সাক্ষাৎ পাইতে কোন কষ্ট হইল না। কপট ব্রাহ্মণেরা রাজাকে কপট আশীর্বাদপূর্বক ফল দিয়া প্রস্থান করিল।

 উহারা চলিয়া গেল, রাজা অমাত্যগণকে লইয়া সেই-সকল ফল আহার করিবার আয়োজন করিলেন। রাজা একটি ফল হাতে লইয়া দেখিলেন যে, উহার ভিতর হইতে একটি অতিশয় ক্ষুদ্র কীট বাহির হইয়াছে। উহার শরীর তাম্রবর্ণ, চোখদুটি কাল কাল।

 মুনি বলিয়াছিলেন, সাতদিনের ভিতরে রাজার মৃত্যু হইবে। সেদিনকার সূর্য অস্ত গেলেই সেই সাত দিন পূর্ণ হয়, রাজারও বিপদ কাটিয়া যায়। সূর্যও তখন গাছের আড়ালে লুকাইতে আরম্ভ করিয়াছেন, অস্ত হইতে আর বিলম্ব নাই। ইহা দেখিয়া রাজার ভয় অনেকটা কমিয়া যাওয়াতে, তিনি তামাসা করিয়া বলিলেন, “এখন আর আমার বিষের ভয় নাই, এখন এই পোকাই তক্ষক হইয়া আমাকে কামড়াইতে আসুক! তাহ হইলে আমার শাপও কাটে, ব্রাহ্মণের কথাও থাকে।”