পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫১৯

 আস্তিক বলিলেন, “আমি এই বর চাহি যে, আপনার যজ্ঞ থামিয়া যাউক। আর যেন ইহার আগুনে পুড়িয়া সাপেদের মৃত্যু না হয়।”

 এ কথা শুনিয়াই ত রাজা চমকিয়া উঠিলেন। তাহাকে যদি হঠাৎ তক্ষকে কামড়াইত, তবুও বোধহয় তিনি এত চমকিয়া উঠিতেন না। তিনি নিতান্ত ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “সেও কি হয়? ঠাকুর, আপনি আর কিছু প্রার্থনা করুন। টাকা কড়ি যত আপনার ইচ্ছা হয়, আমি আপনাকে দিতেছি, কিন্তু যজ্ঞ থামাইতে পারিব না।”

 আস্তিক বলিলেন, “আমি যাহা চাহি, তাহা যদি না পাইলাম, তবে টাকা কড়ি দিয়া কি করিব? আমি আমার মাতুলদিগকে বাঁচাইতে আসিয়াছি। টাকার জন্য আসি নাই।”

 তখন মুনিগণ বলিলেন, “মহারাজ, যখন দিবেন বলিয়াছেন, তখন এই বালক যাহা চাহিতেছেন তাহা ইহাকে দিতেই হইতেছে।”

 এদিকে তক্ষক আগুনের কাছে আসিয়া উপস্থিত হইয়াছে। আর এক মুহূর্ত পরে পুড়িয়া মারা যাইবে। ইহা দেখিয়া আস্তিক চিৎকার পূর্বক তিনবার তাহাকে বলিলেন, “তিষ্ঠ! তিষ্ঠা! তিষ্ঠা!” (থামো! থামো! থামো!) তাহাতেই তক্ষক আর আগুনে না পড়িয়া কিছুকাল শূন্যে থামিয়া রহিল।

 ঠিক এই সময়ে ব্রাহ্মণদিগের কথায়, জনমেজয় আস্তিককে বর দিতে সম্মত হইয়া বলিলেন, “আচ্ছা তবে যজ্ঞ থামুক! সর্পগণের ভয় দূর হউক।”

 এ কথায় তখনই যজ্ঞ থামিয়া গেল, তক্ষকেরও আর পুড়িয়া মরিতে হইল না। যাহারা যজ্ঞ দেখিতে আসিয়াছিল, তাহারা ইহাতে সন্তুষ্ট হইয়া ‘জয় জয়’ শব্দে কোলাহল করিতে লাগিল। এইরূপে আস্তিক তাহার মাতুলদিগকে রক্ষা করিয়াছিলেন।

 আস্তিকের এই কার্যে সাপেরা প্রাণে বাঁচিয়া গেল। সুতরাং তাহারা যে সন্তুষ্ট হইল, এ কথা বলাই বাহুল্য। তাহারা বার বার বলিতে লাগিল, “বাছা, তুমি আমাদের প্রাণ রক্ষা করিয়াছ, বল আমরা কি করিয়া তোমাকে সন্তুষ্ট করিব।”

 আস্তিক বলিলেন, “আপনারা যদি আমার উপর সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে, আমার নাম যে লইবে, আপনারা আর তাহাকে হিংসা করিবেন না।”

 সাপেরা বলিল, “এখন হইতে যে তোমার নাম লইবে আমরা তাহার কোন অনিষ্ট করিব না। এ কথা যে অমান্য করিবে তাহার মাথা শিমূলের কলার মত ফাটিয়া যাইবে।”


সাগরে জল আনিবার কথা

 অগস্ত্য মুনি সাগরের জল খাইয়া ফেলিয়াছিলেন। সে জল তাহার পেটে গিয়া হজম হইয়া গেল, সুতরাং কাজের সময় তিনি আর তাহা ফিরাইয়া দিতে পারলেন না। বহুকাল পর্যন্ত, মরা নদীর খাতের ন্যায়, সাগর শুকনো পড়িয়া ছিল। তারপর কেমন করিয়া আবার জল আসিল, সে অতি আশ্চর্য ব্যাপার।

 ইক্ষ্বাকু বংশে সগর নামে একজন অতি প্রসিদ্ধ রাজা ছিলেন। রূপে, গুণে, বিদ্যায়, বীরত্বে, তাঁহার সমান আর সেকালে কোন রাজাই ছিলেন না। সকল বিষয়েই তিনি সুখী ছিলেন, কেবল এক বিষয়ে তাঁহার বড়ই দুঃখ ছিল, তাঁহার পুত্র ছিল না। পুত্র লাভের জন্য