পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তিনি তাঁহার বৈদর্ভী এবং শৈব্যা নাম্নী দুই রানীকে লইয়া কৈলাস পর্বতে গিয়া কঠিন তপস্যা আরম্ভ করিলেন। কিছুদিন পরে, শিব রাজার তপস্যায় তুষ্ট হইয়া তাঁহার নিকট আসিয়া বলিলেন, “মহারাজ, তুমি কি চাহ?”

 রাজা ভক্তিভরে শিবকে প্রণাম করিয়া, জোড় হাতে বলিলেন, “ভগবন, আমার পুত্র নাই। আমার মৃত্যুর পর আমার বিশাল সাম্রাজ্য ভোগ করিবার লোক থাকিবে না; আমার বংশলোপ হইয়া যাইবে, সুতরাং, যদি আমার প্রতি আপনার দয়া হইয়া থাকে, তবে অনুগ্রহ করিয়া, যাহাতে আমার পুত্র হয়, এমন বর দিন।”

 শিব কহিলেন, “মহারাজ, তোমার এক রানীর ষাট হাজার পুত্র হইবে, কিন্তু তাহারা সকলেই এক সঙ্গে মরিয়া যাইবে। আর এক রানীর একটি মাত্র পুত্র হইবে, সে-ই তোমার বংশ রক্ষা করিবে।”

 কিছুদিন পরে বৈদর্ভীর ষাট হাজার আর শৈব্যার একটি পুত্র হইল। বৈদর্ভীর ষাট হাজার পুত্র জন্মিবার সময় বড়ই আশ্চর্য ঘটনা হয়। ছেলেগুলি একটি লাউয়ের ভিতরে ছিল। লাউ দেখিয়া রাজা তাহা ফেলিয়া দিবার আজ্ঞা দিয়াছেন, এমন সময় আকাশ হইতে কে যেন অতি গম্ভীর স্বরে বলিল, “মহারাজ, ওটাকে ফেলিয়া দিও না। উহার ভিতরেই তোমার ষাট হাজার পুত্র আছে। উহার ষাট হাজারটি বীচিকে ঘৃতের কলসির ভিতর রাখিয়া দাও, দেখিবে তোমার ষাট হাজার পুত্র হইবে।”

 সুতরাং রাজা আর লাউটি ফেলিয়া না দিয়া, উহার বীচিগুলি ঘিয়ের ভিতরে রাখিয়া দিলেন ইহাতে অনেক দিন পরে, সেই বীচির ভিতর হইতে ষাট হাজারটি সুন্দর খোকা বাহির হইল; সেই খোকাগুলি বড় হইয়া ষাট হাজারটি অসুরের মতন গোঁয়ার গুণ্ডা হইল। তাহাদের জ্বালায় মানুষের কথা আর কি বলিব, দেবতা গন্ধর্ব পর্যন্ত সুস্থির হইয়া বসিতে পাইত না।

 শেষে সকলে ইহাদের দৌরাত্ম্যে জ্বালাতন হইয়া, ব্রহ্মার নিকট গিয়া বলিল, “ভগবন্, আর ত পারি না! ইহাদের দৌরাত্ম্য নিবারণের একটা উপায় করুন!”

 ব্রহ্মা বলিলেন, “তোমাদের কোন চিন্তা নাই। আর অতি অল্পদিনের ভিতরেই ইহারা নিজের স্বভাব দোষে নষ্ট হইবে।”

 এ কথায় সকলে কতকটা নিশ্চিত হইয়া ব্রহ্মাকে প্রণাম পূর্বক যে যাহার ঘরে ফিরিল।

 তারপর সগর অশ্বমেধ যজ্ঞ আরম্ভ করিলেন। যজ্ঞের ঘোড়ার রক্ষক হইল ঐ ষাট হাজার রাজপুত্র। তাহারা দিনকতক তাহাকে দেশে দেশে তাড়াইয়া ফিরিল। সে শুকনো সাগরের বালির উপর দিয়া ছুটতে ছুটতে কোথায় যে চলিয়া গেল, রাজপুত্ররা তাহার কিছুই বুঝিতে পারিল না। তখন তাহারা দেশে ফিরিয়া তাহদের পিতাকে বলিল, “বাবা, সর্বনাশ ত হইয়াছে, ঘোড়া হারাইয়া গিয়াছে!”

 এ কথা শুনিয়া সগর বলিলেন, “তোমরা সকলে মিলিয়া তাহকে খুব ভাল করিয়া খোঁজ!”

 তখন রাজপুত্রেরা আবার ঘোড়া খুঁজিতে বাহির হইল, কিন্তু সমস্ত পৃথিবী খুঁজিয়াও তাহার সন্ধান করিতে পারিল না। সুতরাং তাহারা আবার তাহদের পিতার নিকট আসিয়া বিনয়ের সহিত বলিল, “বাবা আমরা শহর, বাজার, পাহাড়, পর্বত, বন, বাদাড়, কিছুই বাকি রাখি নাই। কিন্তু ঘোড়া ত কোথাও খুঁজিয়া পাইলাম না!”