পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৩৩

বুঝিতে পারিলেন না। এইভাবে খানিকক্ষণ কাটিয়া গেল।

 জ্ঞান হইলে শকুন্তলার সেই আংটির কথা মনে হইল;তিনি ভাবিলেন যে, আংটি দেখিলে হয়ত সকল কথা রাজার মনে হইবে কিন্তু হায়! হাতের দিকে চাহিয়া শকুন্তলা দেখিলেন, আংটি নাই। আসিবার সময় একটি নদীতে নামিয়া হাত মুখ ধুইয়াছিলেন, তখন আংটিটি জলে পড়িয়া গিয়াছিল।

 তখন শকুন্তলা নিতান্ত দুঃখের সহিত রাজাকে বলিলেন, “হায়! না জানি অন্য জন্মে আমি কি ভয়ানক পাপ করিয়াছিলাম, শিশুকালে মা আমাকে ফেলিয়া দিল; আবার এখন তুমি পতি হইয়াও আমাকে চিনিতে পারিলে না। আমার জন্য আমি ভাবি না, কারণ পিতার নিকট গেলেই আমি আশ্রয় পাইব। কিন্তু আমাদের পুত্রটিকে তুমি আদর না করিয়া বড়ই অন্যায় করিতেছ।”

 ইহার উত্তরে দুষ্মন্ত বলিলেন, ‘স্ত্রীলোকেরা বড় মিথ্যাবাদী, বোধহয় তুমিও মিথ্যা কথা কহিতেছ, তোমার কথায় কে বিশ্বাস করিবে?”

 এ কথা শুনিয়া শকুন্তলা বলিলেন, “তুমি যদি আমাকে অশ্রদ্ধা কর, তবে আমি নিজেই এখান হইতে চলিয়া যাইব;আর কখনো তোমার সহিত কথা কহিব না। কিন্তু হে দুষ্মন্ত! তুমি নিশ্চয় জানিও যে, তোমার পরে আমাদিগের এই পুত্রই এই পৃথিবীর রাজা হইবে।”

 এমন সময় স্বর্গ হইতে দেবতাগণ অতি গভীর স্বরে দুষ্মন্তকে ডাকিয়া বলিলেন, “দুষ্মন্ত! শকুন্তলা তোমার রাণী, এই বালক তোমার পুত্র। তুমি শকুন্তলাকে অপমান করিও না। তাহাকে আর তোমার পুত্রকে আদর করিয়া ঘরে লও, আমাদের কথায় এই বালকের ভরত নাম রাখ। তোমার পরে ইনি অতিশয় বিখ্যাত রাজা হইবেন।”

 দেবতাদের কথা শুনিবামাত্র দুষ্মন্তের সকল কথা মনে পড়িল। সভার লোক যে কি আশ্চর্য হইল;তাহা কি বলিব। কিন্তু অল্পক্ষণের ভিতরেই তাহাদিগকে ইহার চেয়েও অধিক আশ্চর্য হইতে হইল।

 দেবতাদের কথা শুনিয়া সকলে আনন্দে কোলাহল করিতেছে, এমন সময় রাজার প্রহরীগণ এক জেলেকে বাঁধিয়া রাজসভায় উপস্থিত করিল, প্রহরীরা বলিল, “এই জেলে রাজার আংটি চুরি করিয়া বাজারে বেচিতে গিয়াছিল।”

 জেলে বেচারা হাত জোড় করিয়া কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, “দোহাই মহারাজ, আমি আংটি চুরি করি নাই, একটা মাছের পেটের ভিতরে পাইয়াছি। ও আংটি কাহার, আমি তাহা জানি না।”

 জেলের কথা শুনিয়া সকলে বলিল, “তবে বল ব্যাটা, তুই সেই মাছ কোথায় পাইয়াছিলি।”

 জেলে বলিল, “আমি শচী তীর্থের নিকটে জাল ফেলিয়া সেই মাছ ধরিয়া ছিলাম।”

 আংটি যে রাজার তাহাতে কোন সন্দেহ নাই, কেন না রাজার নাম তাহাতে লেখা রহিয়াছে। যে উহা হাতে নেয়, সেই বলে, “তাই ত, এ যে মহারাজের আংটি, এ আংটি মাছের পেটের ভিতরে কি করিয়া গেল?”

 তাহাতে রাজা আংটিটি দেখিবার জন্য হাতে লইলেন। সে আংটির দিকে তাকাইবামাত্র তিনি আশ্চর্য হইয়া বলিলেন, “এই আংটি আমি শকুন্তলার হাতে পরাইয়া দিয়াছিলাম।”

 ইহার পর কাহারো আর কোন কথাই বুঝিতে বাকি রহিল না। তখন যে কিরূপ সুখ আর