পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 রানী রাজার নিকট কাঁদিয়া বলিলেন, মায়ের আমার হইল কি? রাজা অনেকক্ষণ মাথা চুলকাইয়া বলিলেন, “চল, স্বয়ম্বরের আয়োজন করিয়া উহার বিবাহ দিয়া দিই!

 তারপর দেশ বিদেশে রাজার নিকট সংবাদ গেল, দময়ন্তীর স্বয়ম্বর হইবে, সকলে আসুন। সে সংবাদ শুনিয়া আর কেহই ঘরে বসিয়া থাকিলেন না। দেখিতে দেখিতে রাজারাজড়ায় বিদর্ভ নগর ছাইয়া গেল। সৈন্যের কলরবে, হাতি ঘোড়ার ডাক, আর রথের শব্দে, লোকের কথাবার্তা কহা ভার হইয়া উঠিল।

 রাজারা সকলে স্বয়ম্বরে আসিয়াছে, তাই কয়েকদিনের জন্য তাঁহাদের ঝগড়া বিবাদ থামিয়া গিয়াছে, আর যুদ্ধও হয় না, তেমন ভাবে লোকও মরিয়া স্বর্গে যায় না। ইন্দ্র ভাবিলেন, ‘সে কি! যুদ্ধে মরিয়া মাসে মাসে এতগুলি লোক স্বর্গে আসে, এ মাসে ত সেরকম আসিল না। ইহার কারণ কি? সেখানে নারদ মুনি ছিলেন, তিনি বলিলেন, ‘দেবাজ, রাজারা সকলে দময়ন্তীর স্বয়ম্বরে গিয়াছেন, তাই এখন আর যুদ্ধ হয় না, লোকও অধিক মরে না।’

 নারদের কথা শুনিয়া স্বর্গের সকলে বলিল, “আমরাও দময়ন্তীর স্বয়ম্বব দেখিতে যাইব। তখনই দেবতারা সকলে নিজ নিজ বাহনে চড়িয়া পরম আনন্দে বিদর্ভ দেশে যাত্রা কবিলেন। বিদর্ভ দেশের কাছে আসিয়া তাহারা দেখিলেন যে, নিষধের রাজা নলও সেই পথে স্বয়ম্বরে যাইতেছে। নলকে দেখিয়া দেবতাদিগের বড়ই ভয় হইল। তাঁহাদের মনে হইল যে, রাজার মত সুন্দর লোক তাঁহাদের মধ্যে কেহই নাই। তখন, কেহ বলিলেন, তাই করি?’ কেহ বলিলেন, ‘চল! ফিবিয়া যাই!’ আবার কেহ কেহ মনে করিলেন, উহাকে ফাঁকি দিয়া আমাদের কাজ করাইয়া লই।” এই ভাবিয়া তাহাদের চারিজনে নলের নিকট গিয়া বলিলেন, “মহারাজ, তুমি অতিশয় ধার্মিক লোক, তোমাকে আমাদের একটি কাজ, করিয়া দিতে হইবে।

 দেবতাদিগকে দেখিয়া নল, ‘যে আজ্ঞা’ বলিয়া জোড়হাতে জিজ্ঞাসা করিলেন, “আপনারা কে? আমাকে আপনাদের কি কাজ করিতে হইবে?

 দেবতাদের একজন বলিলেন, “আমি ইন্দ্র, ইনি অগ্নি, ইনি যম, আর ইনি বরুণ। আমরা দময়ন্তীকে পাইবার জন্য স্বয়ম্বরে চলিয়াছি। তুমি আমাদের দূত হইয়া দময়ন্তীর নিকটে গিয়া বলিবে, যেন তিনি আমাদের কোন একজনকে বিবাহ করেন।”

 নল বলিলেন, “ইহা কি সুবিচার হইল? আপনারাও দময়ন্তীর জন্য যাইতেছে, আমিও দময়ন্তীর জন্য যাইতেছি। আপনাদের কি উচিত, আমাকে দূত করিয়া পাঠান?”

 দেবতারা বলিলেন, “মহারাজ, তুমি ত বলিয়াছ, যে আজ্ঞা', এখন আবার কি করিয়া, না’ বলিবে? শীঘ্র যাও।”

 নল বলিলেন, “আচ্ছা, আমি নাহয় আপনাদের দূত হইলাম। কিন্তু আমি দময়ন্তীর কাছে কি করিয়া যাইব? তাহার আগেই ত প্রহরীরা আমাকে কাটিয়া ফেলিবে!”

 ইন্দ্র বলিলেন, “তোমার কোন ভয় নাই। প্রহরীরা তোমাকে দেখিতেই পাইবে না। তুমি অতি সহজে দময়ন্তীর নিকট যাইতে পারিবে।”

 একথায় নল দেবতাদিগকে প্রণাম করিয়া দময়ন্তীর নিকট যাত্রা করিলেন। তাহার দরজায় ঢাল তলোয়ার হাতে সিপাহীরা দাঁড়াইয়া ছিল, তিনি তাহাদের সম্মুখ দিয়া চলিয়া গেলেন,