পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৪৭

কোথায় চলিয়াছ?”

 কলি বলি, “দময়ন্তীর স্বয়ম্বরে।”

 ইন্দ্র হাসিয়া বলিলেন, “হাঃ, হাঃ, হা—! স্বয়ম্বর শেষ হইয়া গিয়াছে। দময়ন্তী নলকে মালা দিয়াছেন।”

 এ কথা শুনিবামাত্র কলি ভ্রূকুটি করিয়া চোখ ঘুরাইয়া বলিল, “বটে! আপনারা থাকিতে একটা মানুষকে মালা দিল? ইহার উচিত সাজা দিতে হইবে।”

 দেবতারা বলিলেন, “দময়ন্তীর দোষ নাই, আমরা তাহাকে অনুমতি দিয়াছি। নলের মতন বরকে মালা দিবে না ত কাহাকে দিবে? এমন লোককে শাপ দেওয়া নিতান্ত নিষ্ঠুর কাজ।”

 এই বলিয়া দেবতারা চলিয়া গেলে, কলি দ্বাপরকে বলিল, “দ্বাপর, তুমি কি বল? আমার ত রাগে গা জ্বলিয়া যাইতেছে। যেমন করিয়াই হউক, এই নলের ভিতরে ঢুকিয়া, তাহার সর্বনাশ করিতে হইবে। সে সময় তুমি আমায় সাহায্য করিবে কি না, বল?”

 দ্বাপর বলিল, “তাহা আর বলিতে! অবশ্য সাহায্য করিব।”

 এমনি যুক্তি হইল, এখন একটি ছিদ্র পাইলেই হয়। এ-সকল দুষ্ট দেবতা; পুণ্যবাণ লোকের শবীরে চট করিয়া প্রবেশ করিবার শক্তি ইহাদের নাই। কাজেই কলি নলের সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া দেখিতে লাগিল, তিনি কখনো কোন দোষ করেন কি না। এগার বৎসর ধরিয়া দুষ্ট কলি নলের পিছু পিছু ঘুরিল। এগার বৎসরের ভিতরে সে না পাইল, তাহার একটি কাজের খুঁত, বা একটি কথার ভুল। এগার বৎসর পরে একদিন তিনি সন্ধ্যা উপাসনার আগে পা ধুইতে ভুলিয়া যান, তাই তাহার শরীর অশুচি ছিল। এইটুকু ছিদ্র পাইবামাত্র বেয়ারামের বীজের মত, দুষ্ট কলি তাহার ভিতরে ঢুকিয়া গেল।

 এমনি ভাবে নলকে কাবু করিয়া, কলি নলের ভাই পুষ্করকে গিয়া বলিল, “চল তোমাকে রাজা করিয়া দিই গে।”

 পুষ্কর ভারি দুষ্ট আর নিতান্ত বোকা ছিল, তাই রাজা হওয়ার কথায় তাহার জিবে জল আসিল। সে তখনই লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, “চল! কিন্তু কেমন করিয়া রাজা করিবে?”

 কলি বলিল, “কেন তুমি পাশা খেলিয়া নলকে হারাইয়া দিবে।”

 এ কথা শুনিয়াই পুষ্ক আবার ধপ করিয়া বসিয়া পড়িল—সে পাশার ‘পও জানিত না। কিন্তু কলি বলিল, “ভয় কি? তোমায় কিছুই করিতে হইবে না। আমি তোমাকে জিতাইয়া দিব।”

 তখন পুষ্করের আনন্দ আর সাহস দেখে কে? সে অমনি নলের নিকট গিয়া উপস্থিত। তারপর যতক্ষণ না নল পাশা খেলিতে রাজি হইলেন, ততক্ষণ সে তাহাকে বিশ্রাম করিতে দিল না। খালি বলিল,

 “দাদা! এস, পাশা খেলিতে হইবে!”

 কাজেই আর কি করা যায়, পাশা খেলা আরম্ভ হইল।

 নলের মাথার ভিতরে কলি; পাশার ভিতরে কলি। নল এককথা বলিতে আর-এক কথা বলিয়া বসেন। দারুণ পাশা একরকম বলিতে আর-একরকম হইয়া যায়!

 দময়ন্তী দেখিলেন, সর্বনাশ, হইতে চলিয়াছে। সকলেই বুঝিল, রাজার আজ মাথার ঠিক নাই।