পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মহাভারতের কথা
৫৭৩

পরীক্ষিৎ ও সুশোভনার কথা

 অযোধ্যায় পরীক্ষিৎ নামে এক রাজা ছিলেন।

 একদিন মহারাজ পরীক্ষিৎ ঘোড়ায় চড়িয়া শিকারে বাহির হইলেন। শিকার করিতে করিতে তিনি দেখিলেন যে, একটা আশ্চর্যরকমের হরিণ বনের ভিতর চড়িয়া বেড়াইতেছে। হরিণটা তাঁহাকে দেখিয়াই ছুটিয়া পালাইতে লাগিল। মহারাজও তাহার পিছু পিছু ঘোড়া ছুটাইলেন, কিন্তু কিছুতেই তাঁকে ধরিতে পারিলেন না। সে পাগলা হরিণ বনের ভিতর দিয়া, পাহাড়ের উপর দিয়া, খানা খন্দ পার করাইয়া, তাঁহাকে কত দেশ যে ঘুরাইল, আর কি নাকাল যে করিল, তাহা আর বলিবার নয়। শেষকালে হতভাগা মহারাজকে একটা ঘোর অন্ধকার অরণ্যের ভিতরে আনিয়া গা ঢাকা দিল, তখন তিনি আর কি করেন? তিনি ভাবিলেন, “আর আমার হরিণ তাড়াইয়া কাজ নাই, এখন একটু জল খাইতে পাইলে বাঁচি।

 ভাবিতে ভাবিতে খানিক দূর গিয়াই তিনি দেখিলেন যে একটি অতি সুন্দর সবোবর সেখানে রহিয়াছে। মহারাজ সেই সরোবরে স্নান আর তাহার জল পান করিয়া সুস্থ হইলেন, ঘোড়াটাকে পদ্মের মৃণাল খাইতে দিলেন। তারপর সেই পুকুরের ধারে কোমল সবুজ ঘাসের উপর শুইয়া তিনি বিশ্রাম করিতেছেন, এমন সময় কোথা হইতে অতি মধুর গানের শব্দ তাঁহার কানে আসিয়া পৌছিল। এই ঘোর অরণ্য, ইহাতে মানুষের গতিবিধি নাই, এমন স্থানে কে এমন করিয়া গান গাহিতেছে? মহারাজ যত ভাবেন, ততই তাঁহার আশ্চর্য বোধ হয়। কিন্তু তাহার অধিক ভাবিতে হইল না। খানিক পরেই তিনি দেখিলেন যে, একটি অতি অপরূপ সুন্দরী কন্যা ফুল তুলিতে তুলিতে, আর গান গাহিতে গাহিতে তাঁর দিকেই আসিতেছে। রাজা তখন শশব্যস্তে উঠিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ভদ্রে, তুমি কে? কাহার স্ত্রী?

 কন্যা বলিল, ‘আমি কাহারো স্ত্রী নহি, আমার এখনো বিবাহ হয় নাই।

 রাজা বলিলেন, তবে আমাকে বিবাহ কর।

 কন্যা বলিলেন, আপনি যদি একটি প্রতিজ্ঞা করিতে পারেন, তবে আমি আপনাকে বিবাহ করিতে পারি।

 রাজা বলিলেন, ‘কি প্রতিজ্ঞা?

 কন্যা বলিল, ‘প্রতিজ্ঞাটি এই যে, আপনি কখনো আমাকে জল দেখিতে দিবেন না।

 রাজা বলিলেন, ‘আমি প্রতিজ্ঞা করিতেছি, তোমাকে কখনো জল দেখিতে দিব না।

 তারপর সেই কন্যার সহিত রাজা বিবাহ হইয়া গেল, রাজা যার পর নাই আনন্দের সহিত তাহাকে পাল্কিতে করিয়া অযোধ্যায় লইয়া আসিলেন অযোধ্যায় আসিয়া তাঁহার এই এক বিষম চিন্তা হইল, না জানি কখন রানী জল দেখিয়া বসেন, আর তাহাতে কি সর্বনাশ উপস্থিত হয়।

 আশপাশের সকল পুকুর মাটি দিয়া বুজাইয়া ফেলা হইল, সরযূ নদীর দিকের সকল জানালা বন্ধ হইয়া গেল, ছাতের উপর প্রকাণ্ড দেওয়াল উঠিল। রাজা দাসদাসীদিগকে বলিলেন, “খবরদার, তোরা জল খাইতে পারিবি না।