পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৫৯৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৯৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখিয়া ঔর্বের পূর্বপুরুষগণ তাঁহার নিকট আসিয়া বলিলেন, ‘বৎস, আমরা তোমার তপস্যার বল দেখিয়া আশ্চর্য এবং আনন্দিত হইয়াছি। এখন তুমি ক্রোধ পরিত্যাগ কর। আমরা ক্রোধের বশ নহি, সুতরাং তুমি যাহা করিতে যাইতেছ, তাহাতে আমরা সন্তুষ্ট হইতে পারিতেছি না। ইহাতে তোমার তপস্যার হানি হইবে, তুমি শীঘ্র এ কাজ ছাড়িয়া দাও।’

 ঔর্ব কহিলেন, ‘হে পিতৃগণ! আপনাদের আজ্ঞা পাইয়াও ত আমি রাগ দূর করিতে পারিতেছি না। ক্ষত্রিয়েরা যখন আপনাদিগকে বধ করে, তখন আমি মাতৃগণের ক্রন্দন শুনিয়াছিলাম। সে সময়ে আপনারা প্রাণ রক্ষার জন্য ব্যাকুল হইয়া, এই পৃথিবীতে কোথাও আশ্রয় পান নাই। এখন সেই-সকল কথা স্মরণ করিয়া, রাগে আমার প্রাণ জুলিয়া যাইতেছে। আপনারা নিশ্চয় জানিবেন, আমার সে রাগ এখন যথার্থই আগুন হইয়া দাঁড়াইয়াছে। এ আগুন আমি কোথায় ফেলি, আপনারা তাহা বলিয়া দিন।’

 পিতৃগণ বলিলেন, ‘বৎস, তোমার এই ভীষণ রাগের আগুন তুমি সমুদ্রের জলে ফেলিয়া দাও।’

 এ কথায় ঔর্ব সেই অদ্ভুত আগুন সমুদ্রের জলে ফেলিয়া নিশ্চিন্ত হইলেন। জলে পড়িয়া তাহা অতি বিশাল এবং ভীষণ ঘোড়ার মুখের আকার ধারণ করিল। সেই ঘোড়ার মুখ দিয়া না কি এখনো আগুন বাহির হয়। যাহাকে বাড়বানল বলে, তাহা ঔর্বের সেই রাগের আগুন ভিন্ন আর কিছুই নহে।


অষ্টাবক্র

 মহর্ষি উদ্দালকের শ্বেতকেতু নামে একটি পুত্র, সুজাতা নামে একটি কন্যা, আর কহোড় নামে একটি শিষ্য ছিলেন। শুরুর প্রতি কহোড়ের বড়ই ভক্তি, এবং তাঁহার সেবায় যার পর নাই যত্ন ছিল। তাহাতে উদ্দালক অতিশয় তুষ্ট হইয়া, তাঁহাকে সকল বিদ্যা প্রদানপূর্বক সুজাতার সহিত তাঁহার বিবাহ দিলেন।

 কহোড়ের যে পুত্র হইল, সে বড়ই আশ্চর্য লোক। জন্মিবার পূর্বেই সে তাহার পিতার ভুল ধরিয়াছিল। একদিন সে কহোড়কে বলিল, ‘বাবা, তুমি সকল রাত জাগিয়া পড়, কিন্তু তোমার পড়া ঠিক হয় না।’ সে সময়ে কহোড়ের শিষ্যগণ সেইখানে উপস্থিত থাকায়, সেই শিশুর কথায় তাঁহার নিতান্তই লজ্জাবোধ হইল। সুতরাং তিনি শিশুটিকে এই বলিয়া শাপ দিলেন, ‘যেহেতু তুমি আমার এইরূপ অপমান করিলে, অতএব তোমার শরীরের আটটি স্থান বাঁকা হইবে!’

 পিতার শাপে ছেলেটি এইরূপ বাঁকা হইয়া জন্মগ্রহণ করাতে, তাঁহার ‘অষ্টাবক্র’ নাম রাখা হয়। জন্মের পর অষ্টাবক্র তাঁরা পিতাকে দেখিতে পান নাই, কারণ তাহার পূর্বেই কহোড়ের মৃত্যু হইয়াছিল।

 কহোড় অত্যন্ত দরিদ্র ছিলেন বলিয়া, সুজাতার নানারূপ ক্লেশ হইত। ইহাতে কহোড় দুঃখিত হইয়া মিথিলার রাজা জনকের নিকট কিছু টাকা ভিক্ষা করিতে গেলেন। জনকের সভায় বন্দী নামক বড়ই ভয়ানক রকমের একজন পণ্ডিত ছিলেন। জনকের নিকট কেহ কিছু