পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬০০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 সত্যবতী বলিলেন, “কি করিব মা?”

 রানী বলিলেন, “আমার মনে হয়, তোমার স্বামী তোমাকে যে চরু খাইতে দিয়াছেন, তাহা আমার চরুর চেয়ে অনেক ভাল; তুমি সেই চরু আমাকে খাইতে দাও, আর আমার চরুটা তুমি খাও।”

 মা যখন বলিতেছেন, তখন সত্যবতী আর কি করেন? কাজেই তিনি তাহার নিজের চরু রাণীকে খাইতে দিয়া, রাণীর চরু নিজে খাইলেন। |

 ত্রিকালজ্ঞ মহামুনি ঋচীকের এসকল কথা জানিতে বাকি রহিল না। তিনি ইহাতে দুঃখিত হইয়া সত্যবতীকে বলিলেন, “সত্যবতি, কাজটা ভাল কর নাই। তোমার মাতা রাজরানী, আর তুমি তপস্বিনী। আমি চাহিয়াছিলাম যে, তোমার পুত্রটি ধার্মিক তপস্বী, আর মহারাণীর পুত্রটি তেজস্বী বীর হয়; সেরূপ চরুই আমি প্রস্তুত করিয়াছিলাম। এখন তোমরা চরু বদল করিয়া খাওয়াতে, তোমার ভাই হইবে নিরীহ ব্রাহ্মণ, আর তোমার পুত্র হইবে ঘোরতর ক্ষত্রিয়।”

 এ কথায় সত্যবতী নিতান্ত আশ্চর্য এবং ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “হায়, হায়, কি করিয়াছি। এমন পুত্র লইয়া আমি কি করিব?”

 ঋচীক বলিলেন, “আমি কি করিব? ঐ চরুর ঐ গুণ। তুমি তাহা খাইযা বসিযাছ এখন আর উপায় কি আছে?”

 সত্যবতী বলিলেন, “তোমার পায়ে পড়ি, ইহার একটা উপায় হয় কি না দেখ। নাহয় আমার নাতি ক্ষত্রিয় হউক কিন্তু আমার পুত্রটি যেন তপস্বী ব্রাহ্মণ হয়।”

 ঋচীক বলিলেন, “আচ্ছা তাহা বোধহয় হইতে পারে। তোমার পুত্র ব্রাহ্মণই হইবে, কিন্তু তোমার নাতিটি বড়ই উৎকট যোদ্ধা হইবে।”

 ইহার কিছুদিন পরে সত্যবতীর একটি পুত্র হইলে, তাহাব নাম জমদগ্নি-রাখা হইল। ইনি বড় হইয়া একজন বিখ্যাত মুনি হইয়াছিলেন। সত্যবতীর ভাই হইলেন বিশ্বামিত্র। তিনি যে রাজা হইয়াও কি করিয়া শেষে মুনি হইয়াছিলেন, তাহা আমরা সকলেই জানি।

 জমদগ্নি বড় হইয়া রাজা প্রসেনজিতের কন্যা রেণুকাকে বিবাহ করেন। ইহার পাঁচটি পুত্র হইয়াছিলেন, তাঁহাদের নাম 'রুমন’, ‘সুষেণ’, 'বসু’, ‘বিশ্বাবসু’ এবং ‘রাম'। ইহাদের মধ্যে রাম যদিও সকলের ছোট, তথাপি গুণে তিনি সকলের বড় হইয়াছিলেন, ঋচীক সত্যবতীকে যে উকট যোদ্ধা নাতির কথা বলিয়াছিলেন, রাম সেই নাতি। ইহার কিঞ্চিৎ বয়স হইলেই, ইনি মহাদেবকে তুষ্ট করিবার জন্য গন্ধমাদন পর্বতে গিয়া ঘোরর তপস্যা আরম্ভ করেন এবং শেষে তাহার নিকট হইতে নানারূপ আশ্চর্য অস্ত্র পাইয়া ত্রিভুবনজয়ী অদ্বিতীয় বীর হইয়া উঠেন। মহাদেব তাহাকে এমনই অদ্ভুত একখানি পরশু, অর্থাৎ কুঠার দিয়াছিলেন যে, তাহার ধার কিছুতেই কমিত না, আর তাহার ঘায় পর্বতও খণ্ড খণ্ড হইয়া যাইত। এই পরশুখানি সর্বদাই রামের হাতে থাকিত; এজন্য সেই অবধি তাহার নাম ‘পরশুরাম’ হইল।

 পরশুরাম ব্রাহ্মণের ঘরে জন্মিয়াছিলেন বটে, কিন্তু তাহার মন ছিল ক্ষত্রিয়ের মত কঠিন। সে যে কিরূপ কঠিন, তাহার পরিচয় একটা ঘটনাতেই পাওয়া গিয়াছিল। কোন কারণে একদিন রেণুকার উপর জমদগ্নি মুনির বড়ই ভয়ানক রাগ হয়। রাগে তিনি একেবারে পাগলের মত হইয়া পুত্রগণকে বলিলেন, “তোমরা এখনই রেণুকাকে বধ কর।”