পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০৬
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সহিত তাঁহাকে তৃতীয় মহলে লইয়া গেলেন।

 রাজর্ষি জনক যখন জানিলেন যে, শুকদেব পথশ্রমে কাতর হইয়া তাঁহার সহিত দেখা করিতে আসিয়াছে, তখন তিনি তাঁহার লোকদিগকে বলিলেন, আজ ইহাকে যত্ন পূর্বক বিশ্রাম করাও, কাল আমি ইহার সহিত দেখা করিব।

 এ কথায় জনকের লোকেরা শুকদেবের বিশ্রামের নানারূপ আয়োজন করিতে লাগিল। কি আশ্চর্য আয়োজনই তাহারা করিয়াছিল। সুশীতল সরবত, মনোহর মিষ্টান্ন, সুকোমল শয্যা, সুমধুর গীতবাদ্য, সুন্দর ফুলের সৌরভ ও বিচিত্র পাখার বাতাস, কোন বিষয়েই তাহারা ত্রুটি করে নাই। এমন সেবা দেবতারাও কমই পাইয়া থাকেন। কিন্তু শুকদেব এমন সেবা পাইয়াও কিছুমাত্র চঞ্চল হইলেন না, তিনি সমস্ত রাত্রি ভগবানের চিন্তাতেই কাটাইলেন। |

 পরদিন রাজা জনক পাত্রমিত্র সমেত তাঁহার নিকট আসিয়া অশেষরূপে সমাদর পূর্বক, ভক্তিভরে তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, ভগবন্, আপনি এত কষ্ট করিয়া কিজন্য আমার নিকট আসিয়াছে?

 শুকদেব কহিলেন, “মহারাজ, পিতৃদেব আমাকে বলিয়াছেন যে, আপনার নিকট আসিলে আমি মুক্তির কথা শুনিতে পাইব। আপনি দয়া করিয়া আমাকে সে বিষয়ের উপদেশ দিন।

 এ কথায় জনক শুকদেবকে যে আশ্চর্য উপদেশ দিয়াছিলেন, তেমন উপদেশ আর কেহই দিতে পারেন না। সেই অমূল্য উপদেশ লাভ করিয়া, শুকদেব অপার আনন্দের সহিত হিমালয় পর্বতে চলিয়া গেলেন। ভগবান ব্যাস সে সময়ে পর্বতের পূর্বদিকে একটি অতি নির্জন স্থানে থাকিয়া সুমন্তু, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি ও পৈল নামক চারিটি শিষ্যকে বেদশিক্ষা দিতেছিলেন। শুকদেব তথায় উপস্থিত হইয়া জনক রাজার উপদেশের কথা বলিলে, ব্যাসের মনে অতিশয় আহ্লাদ হইল।

 ক্রমে ব্যাসদেবের শিষ্যেরা বেদশিক্ষা সমাপন করিয়া দেশে চলিয়া গেলেন। তারপর ভগবান ব্যাস এবং নারদের নিকট নানারূপ উপদেশ পাইয়া মুক্তির পথ শুকদেবের নিকট অতি পরিষ্কার এবং সহজ হইয়া গেল। তখন তাঁহার মনে এই চিন্তা হইল যে, সংসারে থাকিলে অনেক কষ্ট পাইতে হয়, আমি মোগা বলে এই দেহ ত্যাগ করিয়া ইহার চেয়ে উৎকৃষ্ট স্থানে চলিয়া যাইব।’

 এই ভাবিয়া শুকদেব তাঁহার পিতার নিকট উপস্থিত হইয়া, তাহাকে প্রণাম পূর্বক বিনীতভাবে বলিলেন, পিতঃ! আমার আর সংসারে থাকিতে ইচ্ছা নাই। অনুমতি করুন, আমি যোগবলে ইহার চেয়ে উৎকৃষ্ট স্থানে চলিয়া যাই।

 ব্যাস বলিলেন, ‘বৎস, ক্ষণকাল অপেক্ষা কর, আমি তোমাকে দেখিয়া চক্ষু জুড়াইয়া লই।

 কিন্তু পিতার এইরূপ স্নেহের কথায়ও কিছুমাত্র ব্যাকুল না হইয়া, শুকদেব সেখান হইতে কৈলাস পর্বতে চলিয়া আসিলেন। সেই পর্বতের চূড়ায় বসিয়া যোগ সাধন করিতে করিতে ঐমে ভগবানের দেখা পাইয়া, তাঁহার আত্মা আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া উঠিল। দেখিতে দেখিতে তিনি বায়ুর ন্যায় আকাশে উড়িয়া প্রবল বেগে চলিয়া যাইতে লাগিলেন। তখন তাঁহাকে সুর্যের ন্যায় ঊল দেখা যাইতেছিল, আর তিনি দেখিতে পাইতেছিলেন যে, সমুদয় সৃষ্টি ভগবানের দ্বারা পরিপূর্ণ হইয়া রহিয়াছে। সে সময়ে দেবতাগণ তাঁহার উপরে পুষ্পবৃষ্টি