পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬১৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

দেবতারা কিছুকাল তাহার সহিত খুবই যুদ্ধ করিয়াছিলেন, কিন্তু সে যুদ্ধে তাঁহার কি হইবে? সে তাঁহাদের অস্ত্রশস্ত্রকে মশার কামড়ের মত অগ্রাহ্য করিয়া, খালি দেখিতে লাগিল, কোনটা ইন্দ্র। তারপর তাঁহাকে চিনিবামাত্র, সে তাঁহাকে খপ করিয়া ধরিয়া, মুখের ভিতরে পুরিয়া, মুহুর্তের মধ্যে যুদ্ধের ঝঞ্জাট মিটাইয়া দিল।

 ভাগ্যিস দেবতাদিগের নিকট “জৃম্ভিকা”অর্থাৎ “হাইতোলানি” নামক অতি আশ্চর্য অস্ত্র ছিল, নহিলে সর্বনাশই হইয়াছিল আর কি! দেবতাগণ তাড়াতাড়ি সেই অস্ত্র আনিয়া প্রাণপণে তাহা ছুঁড়িয়া মারিবামাত্র, দুষ্ট দৈত্য বিশাল এক হাই তুলিল, আর সেই অবসরে ইন্দ্র যে কিরূপ উধর্বশ্বাসে ছুটিয়া তাহা মুখের ভিতর হইতে বাহিরে আসিলেন, তাহা বুঝিতেই পার।

তারপর আবার ঘোরতর যুদ্ধ আরম্ভ হইল। কিন্তু সেই দুষ্ট দৈত্যের মুখের ভিতর হইতে বাহির হইয়া অবধি, ইন্দ্রের কেমন যেন মন খারাপ হইয়া গিয়াছিল, সুতরাং ইহার পর আরএকবার বৃত্র খুব রুখিয়া উঠিবামাত্র তিনি নিতান্ত ব্যক্তভাবে রণস্থল পরিত্যাগ করিয়া, মন্দর পর্বতের চূড়ায় গিয়া বসিয়া রহিলেন।

 সেইখানে গিয়া দেবতারা তাঁহাকে খুঁজিয়া বাহির করিলেন, কিন্তু সে যাত্রা আর তাঁহাকে যুদ্ধক্ষেত্রে আনিতে পারিলেন না। এই যুদ্ধের শেষ কি করিয়া হইয়াছিল—কি করিয়া দধীচ মুনির হাড় দিয়া বজ্র প্রস্তুত হয়, আর সেই বজ্র দিয়া ইন্দ্র বৃত্রকে বধ করেন, এ-সকল কথা আমরা কিছু কিছু জানি। তবে, ইন্দ্র যে বস্ত্র হাতে পাইয়াই অমনি তাহা লইয়া বৃত্রের সহিত যুদ্ধ করিতে গিয়াছিলেন, এ কথা বোধ হয় ঠিক নহে। বাস্তবিক ইন্দ্র সরল ভাবে যুদ্ধ করিয়া বৃত্রকে বধ করেন নাই।

 সম্মুখ যুদ্ধে বৃত্রকে আঁটিতে না পারিয়া, দেবতারা স্থির করিলেন যে, উহাকে কৌশল পূর্বক বধ করিতে হইবে, এই মনে করিয়া তাঁহার মুনিদিগকে সঙ্গে করিয়া বৃত্রের নিকট গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে গিয়া মুনিরা তাহাকে বলিলেন, “হে বৃত্র! তোমার তেজে জীবগণের বড়ই ক্লেশ হইতেছে, সুতরাং তুমি যুদ্ধ পরিত্যাগ করিয়া ইন্দ্রের সহিত বন্ধুতা স্থাপন কর। “

 বৃত্র প্রথমে এ কথায় সম্মত হয় নাই। কিন্তু তপস্বীগণ সহজে ছাড়িবার পাত্র ছিলেন না। তাঁহারা তাহাকে মিষ্ট কথায় ভুলাইয়া, বেশ করিয়া বুঝাইয়া দিলেন যে, সে ইন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুতা করিলে বড়ই চমৎকার ব্যাপার হইবে। তখন বৃত্র তাঁহাদিগকে বলিল, “ঠাকুর মহাশয়েরা আপনারা আমার মান্যলোক, তাহাতে সন্দেহ নাই। তবে ইহার মধ্যে একটা কথা আছে। আমি আপনাদের আজ্ঞা পালন করিতে প্রস্তুত আছি, কিন্তু তাহার আগে দেবতাগণকে একটি প্রতিজ্ঞা করিতে হইবে। উহারা শুকনো জিনিস দিয়া বা ভিজা জিনিস দিয়া, পাথর দিয়া বা কাঠ দিয়া, অস্ত্র দিয়া বা শস্ত্র দিয়া, দিনের বেলায় বা রাত্রিতে, আমাকে বধ করিতে পারিবেন। এ কথায় যদি দেবতারা রাজি হন তবে আমি তাঁহাদের সহিত বন্ধুতা করিতে প্রস্তুত আছি।”

 মুনিরা বলিলেন, “তথাস্তু”। সুতরাং তখন বৃত্র ভারি খুশি হইয়া ইন্দ্রের সহিত বন্ধু তা করিল। তাহতে ইন্দ্র মনে মনে বলিলেন, “বেশ হইয়াছে, এখন ইহাকে একবার বাগে পাইলেই বধ করিব।”

 ইহার পর একদিন সন্ধ্যাকালে ইন্দ্র সমুদ্রের ফেনা দেখিয়া চিন্তা করিলেন যে, এই