পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪০
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

গর্তের নিকট লুকাইয়া রাখিল, শিয়াল ইহার কিছুই জানিতে পারিল না। বাঘ তখন ঘুমাইয়া আছে, ঘুম হইতে উঠিয়াই খাইবে। কিন্তু সেদিন সে ঘুম হইতে উঠিয়া দেখিল, তাহার খাইবার কিছুই নাই।

 তখন বাঘের কেমন রাগ হল, তাহা বুঝিতেই পার। সে রাগে গর্জন করিতে করিতে সকলকে বলিল, ‘কোন্ দুষ্ট আমার মাংস খাইল? শীঘ্র তাহাকে ধরিয়া আন।

 তখন সেই দুষ্ট চাকরেরা তাহাকে বলিল, মহারাজ, আপনার সেই মন্ত্রী মহাশয়ই এই কাজ করিয়াছেন। মহারাজ ভাবলেন, বুঝি তিনি বড়ই ধার্মিক, কিন্তু এই দেখুন, তাঁহার কেমন কাজ।

 এই বলিয়া শিয়ালের গর্তের কাছে লুকান সেই মাংস আনিয়া তাহারা বাঘকে দেখাইল। তখন বাঘ রাগে দুই চোখ ঘুরাইয়া বলিল, বাপুসকল! তোমরা শীঘ্র সেই দুষ্টকে বধ কর।

 দুষ্ট চাকরেরা তখনই গিয়া শিয়ালকে মারিয়া ফেলিত, কিন্তু বাঘের মা তাহা হইতে দিল না। সে বড়ই বুদ্ধিমতী বাঘিনী ছিল। তাই চাকরদের ছল বুঝিতে পারিয়া সে বাঘকে বলিল, বাঘ! ইহারা কেমন লোক, তাহা ত জানই! ইহাদের কথায় কি বিশ্বাস করিতে আছে? শিয়ালকে তুমি কত ভাল জিনিস দিতে চাও, সে তাহা নেয় না। সে কেন মাংস চুরি করিতে যাইবে? তুমি ভাল করিয়া ইহার বিচার কর।

 মায়ের কথায় বাঘ শান্ত হইল। তারপর একটু খবর লইয়াই সে বেশ বুঝিতে পারিল যে, শিয়ালের কোন দোষ নাই, সমস্তই সেই দুষ্ট চাকরদের চক্রান্ত।

 তখন আর শিয়ালের আদরের সীমা রহিল না। কিন্তু বুদ্ধিমান শিয়াল বেশ বুঝিতে পারিয়াছিল যে, এমন মুনিবের চাকরি করা ধার্মিক লোকের কাজ নহে। সুতরাং সে বাঘকে বিনয় করিয়া বলিল, “মহারাজ! এমন অপমানের পর আর আপনার নিকট কি করিয়া থাকিব? আপনার মঙ্গল হউক। আমি চলিলাম।

 এই বলিয়া সে সেখান হইতে প্রস্থান করিল।


মহর্ষি ও কুকুরের কথা

 সত্যযুগে এক অতি দয়ালু মুনি ছিলেন, তাঁহার তপস্যার তেজ বড়ই আশ্চর্য ছিল। একটা কুকুর সেই মুনি-ঠাকুরের অতিশয় ভক্তি করিত। সে সর্বদা তাঁহার নিকট বসিয়া থাকিত। আর তিনি তাহার দিকে চাহিলেই আহ্লাদে লেজ নাড়িত, মহর্ষিকে সে অতিযত্নের সহিত পাহারা দিত।কখনো তাঁহাকে ছাড়িয়া যাইত না। এজন্য মহর্ষিও তাহাকে বড়ই স্নেহ করিতেন।

 একদিন একটা দ্বীপী সেই কুকুরটাকে খাইবার জন্য মহর্ষির আশ্রমে আসিয়া উপস্থিত হইল। বেচারা কুকুর তখন লেজ গুটাইয়া, প্রাণের ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে, এক-একবার মুনি-ঠাকুরের পিছনে গিয়া কেঁউ কেঁউ করে, কিন্তু কিছুতেই স্থির হইতে পারে না। তাহার এইরূপ দুর্দশা দেখিয়া মুনির দয়া হওয়াতে তিনি বলিলেন, ‘ভয় কি বাছা তোর? এই আমি তোকেও দ্বীপী করিয়া দিতেছি। এরপর আর দ্বীপী দেখিলেই তোকে পাইতে হইবে না।

 এই বলিয়া মহর্ষি তাহাকে দ্বীপী করিয়া দিলেন, তখন আর সেই কুকুরের আহ্বাদের সীমা