হইয়াছে। তাঁহার শরীর কাঁপিতেছে, তিনি আর দাঁড়াইতে পারেন না। মুনি একবার রেণুকার সেই অবস্থার দিকে, আর একবার সূর্যের দিকে চাহিয়া দেখিলেন, তারপর দুই চক্ষু লাল করিয়া বিষম ভ্রুকুটির সহিত তীর ধনুক উঠাইয়া সূর্যকে বলিলেন, “বটে, তোমার এতই আস্পর্ধা! তুমি রেণুকাকে কষ্ট দিয়াছ! দাঁড়াও! তোমাকে দেখাইতেছি!”
সূর্য ত তখন, “বাপ রে! মারিল রে!” বলিয়া কাঁদিয়া অস্থির! তিনি তাড়াতাড়ি এক ব্রাহ্মণের বেশে জমদগ্নির নিকট আসিয়া জোড়হাতে বলিলেন, “ভগবন! সূর্য আপনার নিকট কি দোষ করিল? তাহার তেজ ভিন্ন ফল শস্য কিছুই থাকিতে পারে না, তাই এ সময়ে তাহার একটু গরম না হইলে চলিবে কেন?
তাহার জন্য কি তাহাকে মারিতে হয়? আর তাহাকে মারিবেনই বা কিরূপে? সে যে আকাশে ছুটাছুটি করিয়া বেড়ায়!”
জমদগ্নি ভ্রূকুটি করিয়া বলিলেন, “যাও বাপু! তোমার চালাকি করিতে হইবেনা। আমি টের পাইয়াছি, তুমি কে। আমি বেশ জানি, দুপুর বেলায় মাথার উপর আসিয়া তোমাকে দাঁড়াইতে হয়, সেই সময় আমি তীর মারিয়া তোমাকে কানা করিব।”
তখন সূর্য অতিশয় ব্যস্ত হইয়া বলিলেন, “দোহাই মুনিঠাকুর! আমার ঘাট হইয়াছে, আমাকে ক্ষমা করুন।”
সেকালের মুনিরা চট করিযাই ক্ষেপিয়া যাইতেন, আবার হাত জোড় করিলেই ঠাণ্ডা হইতেন! সূর্যের কথায় জন্মদগ্নি মুনি তুষ্ট হইয়া হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “আচ্ছা ঠাকুর, সে হইবে এখন। কিন্তু আমাব পত্নী যাহাতে তোমার তেজে কষ্ট না পায়, আগে তাহার একটা উপায় কর।”
এ কথায় সূর্য তাঁহার চাদরের ভিতর হইতে একটি ছাতা আর এক জোড়া জুতা বাহির করিয়া জমদগ্নিকে দিলেন। ইহার পূর্বে আর এমন আশ্চর্য জিনিস কেহ কখনো দেখে নাই। মুনিঠাকুর তাহা হাতে লইয়া অপার বিস্ময় এবং কৌতূহলের সহিত, অনেকবার উল্টাইয়া পাল্টাইয়া দেখিলেন, তারপর জিজ্ঞাসা করিলেন, “এ-বল অস্ত্র দিয়া কি করিতে হয়?”
সূর্য বলিলেন, “এই জিনিসটার নাম ছাতা,ইহাকে এমনি করিয়া মাথায় ধরিতে হইবে। আর, এই দুখানির নাম জুতা,ইহাকে এমনি করিয়া পায় পরিতে হইবে।” এই বলিয়া সূর্য চলিয়া গেলেন; রেণুকাও তখন হইতে রৌদ্রের কষ্ট হইতে রক্ষা পাইলেন। সেই অবধি লোকে জুতা পরিতে আর ছাতা মাথায় দিতে শিখিল।