পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৭১

একটি ব্রাহ্মণের নিকট এইরূপ বর চাহিয়াছিল, “আমার যেন ইন্দ্রের সমান একটি পুত্র হয়।” ব্রাহ্মণ বলিলেন, “এমন বর তো আমি তোমাকে দিতে পারিব না বাপু।” ইহাতে ইম্বল যারপরনাই চটিয়া গিয়া ব্রাহ্মণ মারিবার এক ফন্দি বাহির করিল।

 ইম্বলের একটা বড় আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল যে, সে কোনো মরা জন্তুর নাম ধরিয়া ডাকিলে সেই জন্তু অমনি বাঁচিয়া উঠিয়া তাহার নিকট আসিয়া উপস্থিত হইত। কোনো ব্রাহ্মণ তাহার বাড়িতে আসিলে সে বাতাপিকে ছাগল সাজাইয়া, সেই ছাগলের মাংস রাঁধিয়া তাহাকে খাওয়াইত। ব্রাহ্মণ খাওয়া-দাওয়া সারিয়া বিশ্রাম করিতে বসিলে দুষ্ট দৈত্য ডাকিত, ‘বাতাপি! বাতাপি!’ অমনি বাতাপি সেই ব্রাহ্মণের পেট ছিড়িয়া হাসিতে হাসিতে বাহির হইয়া আসিত। এমনি করিয়া হতভাগা অনেক ব্রাহ্মণ মারিয়াছিল।

 এই সময়ে একদিন অগস্ত্য পথে চলিতে চলিতে দেখিলেন যে, এক গর্তের ভিতরে কতকগুলি লোক ঝুলিতেছে, তাহাদের মাথা নীচের দিকে পা উপরদিকে। সেই লোকগুলিকে দেখিয়া অগস্ত্যের বড়ই দয়া হওয়ায় বলিল, “বাপু, আমরা তোমার পূর্বপুরুষ। তুমি বিবাহ কর নাই, তাই আমাদের এই দশা। তুমি যদি বিবাহ কর আর তোমার ছেলে হয়, তবে আমাদের দুঃখ দূর হইতে পারে।”

 এ কথায় অগস্ত্য অতিশয় ব্যস্ত হইয়া বিবাহের চেষ্টা দেখিতে লাগিলেন কিন্তু কোথাও একটি মনের মতন কন্যা খুঁজিয়া পাইলেন না। শেষে আর কোনো উপায় না দেখিয়া তিনি নিজেই একটি কন্যার সৃষ্টি করিলেন। সংসারের সকল জন্তুর মধ্যে যাহার শরীরে যে স্থানটি সকলের চেয়ে সুন্দর সেইরূপ করিয়া কন্যাটির শরীরে সকল স্থান গড়া হইল। তেমন সুন্দর আর কেহ কখনো দেখে নাই। সেই কন্যা বিদর্ভ দেশের রাজার ঘরে গিয়া তাঁহার মেয়ে হইয়া জন্মগ্রহণ করিল; রাজা তাহার নাম রাখিলেন, লোপামুদ্রা।

 লোপামুদ্রা যখন বড় হইলেন, তখন অগস্ত্য আসিয়া রাজাকে বলিলেন, “মহারাজ, আপনার কন্যাটিকে আমি বিবাহ করিব।”ইহাতে রাজা আর রাণী তো বড়ই বিপদে পড়িলেন। এত আদরের কন্যাটিকে কদাকার দরিদ্র মুনির হাতে দিতে কিছুতেই মন উঠিতেছে না; না দিলে আবার মুনি না জানি কি শাপ দেন, এখন উপায় কি হইবে? এমন সময় লোপামুদ্রা বলিলেন, “বাবা আমার জন্য আপনারা চিন্তিত হইবেন না; মুনির সঙ্গে আমার বিবাহ দিন।” সুতরাং শীঘ্রই অগস্ত্য আর লোপামুদ্রার বিবাহ হইয়া গেল।

 বিবাহের পর লোপামুদ্রা তপস্বিনীর বেশে স্বামীর গৃহে আসিয়া বাস করিতে লাগিলেন। অগস্ত্যের ইচ্ছ হইল, তাহাকে রাজকন্যার মতন সুন্দর বসন-ভূষণ পরাইয়া রাখেন। কিন্তু তিনি অতি দরিদ্র;বসন-ভূষণ কোথায় পাইবেন? কাজেই ইহার জন্য তাহাকে ভিক্ষায় বাহির হইতে হইল। এক এক রাজার নিকট যান, আর বলেন, “আমি আপনার নিকট ধন চাহিতে আসিয়াছি। আপনি অন্যের ক্লেশ বা ক্ষতি না জন্মাইয়া যদি আমাকে কিছু দিতে পারেন, তবে দিন।”

 এইরূপ করিয়া অগস্ত্য ক্রমে শ্রুতধা, ব্রধস্ব আর ত্রসদস্যুর নিকট গেলেন, কিন্তু ইঁহাদের কাহারও হিসাবপত্র দেখিয়া তাঁহার মনে হইল না যে, তিনি অন্যের ক্লেশ না জন্মাইয়া তাঁহকে ধন দিতে পারিবেন। কাজেই ইঁহাদের কাহারও নিকট হইতে তাঁহার ধন লওয়া হইল না। তখন রাজারা তাঁহাকে বলিলেন, “ঠাকুর! চলুন আপনাকে লইয়া ইম্বল দানবের নিকট