পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৭৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

পাইবে? সে ঘোড়া পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর, দক্ষিণ কোনো দিকেই ছিল না, ছিল ঈশান কোণে। সেইখানে যাইবামাত্র রাজপুত্রেরা দেখিল যে, কপিল মুনি সেখানে বসিয়া আছেন, ঘোড়াটি তাঁহার কাছে পাইচারি করিতেছে।

 কপিলকে দেখিয়াই রাজপুত্রেরা ভাবিল, ‘এই চোর!’ অমনি তাহারা ষাট হাজার ভাই মিলিয়া খস্তা, লাঙ্গল, গাছ, পাথর হাতে তাঁহার দিকে ছুটিতে ছুটিতে বলিল, ‘বটে রে দুষ্ট, তুই আমাদের ঘোড়া চুরি করিয়াছিস? দাঁড়া! এই আমরা যাইতেছি।’

 তখন কপিল ভয়ংকর রাগের সহিত এমনি এক হুংকার ছড়িলেন যে, সে হুংকারেই সেই ষাট হাজার রাজপুত্র পুড়িয়া ছাই হইয়া গেল।

 এদিকে রাজা পথ চাহিয়া বসিয়া আছে, তাঁহার পুত্রেরা ঘোড়া লইয়া আসিবে, তবে যজ্ঞ শেষ হইবে। কিন্তু রাজপুত্রেরা আর ফিরিল না। তখন তিনি আবার অংশুমানকে ডাকিয়া ঘোড়া খুঁজিতে পাঠাইলেন। এবারে অংশুমানের কাজ অনেকটা সহজ, কারণ তাহার খুড়ারা ইহার আগেই পাতালে যাইবার পথ প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছে। সেই পথে চলিতে চলিতে কিছুদিন পরে সেই ভয়ংকর হাতির সহিত তাঁহার দেখা হইল। অংশুমান তাহাকে নমস্কার করিয়া বলিলেন, “হাতি মহাশয়, আপনার মঙ্গল তো? আমি অসমঞ্জের পুত্র অংশুমান, আমার খুড়াদিগকে খুঁজিতে আসিয়াছি। আপনি কি তাঁহাদের বা আমাদের ঘোড়াটির কোনো সংবাদ রাখেন?” হাতি বলিল, “হা ঁবাপু, এই পথে যাও, ঘোড়া পাইবে।”

 এমনি করিয়া ক্রমে সেই চারিটা হাতির প্রত্যেকের সঙ্গেই অংশুমানের দেখা হইল। তাহার সকলেই বলিল, “যাও বাপু, তুমি ঘোড়া পাইবে।” তারপর আর কিছুদূর গিয়াই তিনি দেখিলেন, তাঁহার খুড়াদের দেহের ছাই পড়িয়া রহিয়াছে, আর তাহার কাছেই সেই ঘোড়াটাও ঘুরিয়া বেড়াইতেছে। খুড়াদের এই দুর্দশার কথা ভাবিয়া অংশুমানের মনে বড়ই কষ্ট হইল; কিন্তু এখন তো আর দুঃখ করিয়া ফল নাই, এখন ইহাদের তর্পণ করিতে পারিলে তবেই ইঁহাদের স্বর্গ লাভ হয়। তর্পণের জন্য অংশুমান জল খুঁজিতে লাগিলেন, কিন্তু কোথাও একটু জল পাওয়া গেল না।

 জল খুঁজিতে খুঁজিতে গরুড় পক্ষীর সহিত অংশুমানের দেখা হইল। সেই পাখি ছিল অংশুমানের খুড়াদিগের মামা। সে অংশুমানকে বলিল, “ভাই, তোমার খুড়াদিগের তর্পণের কাজ যে-সে জলে হইবে না। কপিলের তেজে তাহারা ভস্ম হইয়াছে গঙ্গার জল ছাড়া ইহাদের তর্পণ তো হইবার নয়। তুমি এখন ঘোড়াটি নিয়া দেশে যাও, তোমার পিতামহের যজ্ঞ সমাপন হউক।”

 সুতরাং অংশুমান অগত্যা ঘোড়া লইয়া দেশে ফিরিলেন। পুত্রগণের দুর্দশার সংবাদে নিতান্ত দুঃখিত হইয়া সগর যজ্ঞ শেষ করিলেন, কিন্তু গঙ্গার জল দিয়া পুত্রগণের তর্পণের কোনো উপায় তিনি করিতে পারিলেন না। গঙ্গা তো তখন পৃথিবীতে ছিলেন না, তিনি থাকতেন স্বর্গে। সগর আরো ত্রিশ হাজার বৎসর রাজত্ব করিয়াছিলেন, এই ত্রিশ হাজার বৎসরের মধ্যে তিনি গঙ্গাকে আনিতেও পারেন নাই, তাঁহার পুত্রগণের উদ্ধারও হয় নাই।

 সগর গঙ্গা আনিতে পারেন নাই। অংশুমানও পারেন নাই। অংশুমানের পুত্র দিলীপ খুবই বড় রাজা ছিলেন, কিন্তু তিনিও গঙ্গা আনিতে পারেন নাই।

 দিলীপের পরে রাজা হইলেন তাঁহার পুত্র ভগীরথ। তিনি যেমন ধার্মিক ছিলেন, তপস্যাও