পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৭৭

সূর্যকে খানিক সময়ের জন্য গিলিয়া একটু শান্ত হইতে পাইবে। সে অনেক আশা করিয়া সূর্যকে গিলিবার জন্য প্রস্তুত হইয়া আসিয়াছিল, কিন্তু সেখানে হনুমানকে দেখিয়া ভয়ে তাহার প্রাণ উড়িয়া গেল। সে অমনি “বাবা গো!” বলিয়া প্রাণপণে দে ছুট্‌, ছুটিতে ছুটিতে একেবারে ইন্দ্রের সভায় গিয়া উপস্থিত।

 ইন্দ্রের কাছে গিয়া সে নিতান্ত ব্যস্তভাবে বলিল, “আপনারই হুকুমে আমি সূর্যটাকে গিলিয়া ক্ষুধা দূর করি; এখন আবার সেই সূর্য কাহাকে দিয়া ফেলিয়াছেন? আজ তো দেখিতেছি আর একটা রাহু তাহাকে গিলিতে আসিয়াছে।”

 এ কথায় ইন্দ্র যারপরনাই আশ্চর্য হইয়া তখনই ঐরাবতে চড়িয়া দেখিতে চলিলেন, ব্যাপারটা কি? রাহু তাহার আগে ছুটিয়া আবার সূর্যের নিকট গিয়াছিল, কিন্তু বেশিক্ষণ সেখানে টিকিতে পারে নাই।

 রাহুর কিনা দেহ নাই, শুধুই একটি গোল মাথা, কাজেই হনুমান, তাহাকে দেখিবামাত্র ফল মনে করিয়া ধরিতে আসিল। রাহু তখন “ইন্দ্র! ইন্দ্র।” বলিয়া চ্যাঁচাইয়া অস্থির। ইন্দ্র বলিলেন, “ভয় নাই আমি এটাকে এখনই মারিয়া ফেলিতেছি।”

 তখন হনুমান তাড়াতাড়ি ইন্দ্রের দিকে ফিরিয়া তাকাইতেই, ঐরাবতের প্রকাণ্ড সাদা মাথাটা তাহার চোখে পড়িল। সে ভাবিল, এটাও বুঝি একটা ফল। এই ভাবিয়া যেই হনুমান, সেটাকে ধরিতে গিয়াছে, অমনি ইন্দ্র ব্যস্ত সমস্ত হইয়া তাহার উপরে বজ্র ছুঁড়িয়া মারিলেন।

 সেই বজ্রের ঘায়ে একটা পাহাড়ের উপর পড়িয়া ‘হনু’ অর্থাৎ দাড়ি ভাঙিয়া যাওয়াতেই তাহার ‘হনুমান’ এই নামটি হইয়াছিল। পাহাড়ের উপর পড়িয়া সে যন্ত্রণায় ছট্‌ফট্‌ করিতেছে এমন সময় তাহার পিতা পবন আসিয়া তাহাকে কোলে করিয়া একটা পর্বতের গুহায় লইয়া গেলেন। তারপর তিনি রাগে অস্থির হইয়া বলিলেন, “দাঁড়াও ইহার শোধ ভালো মতেই লইব।”

 পবন, অর্থাৎ বায়ু, হইতেছে সংসারের প্রাণ, সেই বায়ু রাগিয়া বসিলে কি বিপদই না ঘটিতে পারে। সেই রাগের চোটে বাহিরের বায়ু কোথায় চলিয়া গেল, দেহের ভিতরের বায়ু উৎকট হইয়া উঠিল। নিশ্বাস ফেলিতে না পারিয়া জীবজন্তুর প্রাণ যায় যায়। বায়ুর উৎপাতে সকলের মাথা খারাপ হইয়া গেল, তাহারা এক করিতে আর করিয়া বসে। দেবতাদের অবধি পেট ফাঁপিয়া ফানুসের মতো হইয়া গেল ঠিক যেন উদরীর বেয়ারাম।

 সেই অবস্থায় সকল দেবতা কাঁদিতে কাঁদিতে ব্রহ্মার নিকট গিয়া বলিলেন, “প্রভু! আমাদের দশা দেখুন। ইহার উপায় কি হইবে?” ব্রহ্মা বলিলেন, “উপায় আর কি? চল বায়ুর নিকট গিয়া তাহাকে খুশি করি। ইহা ভিন্ন আর আমাদের গতি নাই।”

 পবন অচেতন হনুমানকে লইয়া কোলে করিয়া গুহায় বসিয়া আছেন এমন সময় ব্রহ্মাকে লইয়া দেবতাগণ সেখানে গিয়া উপস্থিত। ব্রহ্মা আসিয়া হনুমানের মাথায় হাত বুলাইয়া দিতেই সে সুস্থ হইয়া উঠিয়া বসিল, যেন তাহার কখনো কোনো অসুখ হয় নাই। ইহাতে পবন কত দূর খুশি হইলেন বুঝিতেই পার। পবনের রাগ চলিয়া যাওয়াতে কাজেই সংসারের সকল জীবের বিপদও কাটিয়া গেল।

 তখন ব্রহ্মা দেবতাদিগকে ডাকিয়া বলিলেন, “দেখ, এই খোকা বড় হইলে তোমাদের অনেক কাজ করিয়া দিবে। সুতরাং তোমরা সকলে ইহাকে বর দিয়া খুশি কর।” এ কথায়