পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৮৩

তাঁহাদের দুজনকেই হারাইলাম। আমাদের কি দুর্ভাগ্য! আর তো আমরা তাঁহাদের সেই পবিত্র মুখ দেখিতে পাইব না। এখন তাঁহাদের এই শিশুটিকে দেখিয়াই আমাদের মন শান্ত থাকিবে।”

 এখন হইতে এই শিশুটিকে পালন করাই হইল তাহাদের একমাত্র কাজ। চন্দ্রের নিকট হইতে অমৃত চাহিয়া আনিয়া তাহারা শিশুটিকে খাইতে দিল, সেই অমৃতের গুণে শিশু দেখিতে দেখিতে শুক্লপক্ষের চাঁদের মতো বাড়িয়া উঠিল। পিপুল (অশ্বত্থ) গাছেরা তাহার বড়ই যত্ন করিয়াছিল, তাই তাহার নাম হইল পিপ্পলাদ।

 পিপ্পলাদ জানিত, সে সেই সকল গাছপালারই ছানা। তারপর যখন তাহার বুদ্ধি একটু বাড়িয়াছে, তখন সে একদিন তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা করিল, “গাছের ছানা তো গাছের মতোই হয়, মানুষের ছানা মানুষের মতো হয়, পাখির ছানা হয় পাখির মতো আর জন্তুর ছানা জন্তুর মতো। কিন্তু আমি যে তোমাদের ছানা, আমার এমন হাত পা হইল কি করিয়া?”

 গাছেরা বলিল, “বাছা, তুমি তো আমাদের ছনা নও। তুমি মুনির পুত্র, তোমার পিতা মহর্ষি দধীচি, মাতা দেবী প্রাতিথেয়ী।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার বাবা আর মা তবে কোথায় গেলেন?” গাছেরা বলিল, “তোমার পিতা দেবতাদের উপকারের জন্য প্রাণত্যাগ করিয়াছেন, তোমার মাতা সেই দুঃখে আগুনে ঝাঁপ দিয়াছেন।”

 এমনি করিয়া গাছেরা সকল কথাই পিপ্পলাদকে বলিল। তাহা শুনিয়া সে আগে গড়াগড়ি দিয়া কাঁদিল, তারপর গাছেদের মিষ্ট কথায় একটু শান্ত হইয়া রাগে কাঁপিতে কাঁপিতে বলিল, “আমার পিতাকে যাহারা মারিয়াছে, তাহাদিগকে আমি মারিব।”

 তখন গাছেরা সেই ছেলেটিকে চন্দ্রের নিকট লইয়া গিয়া সকল কথা বলিল।

 তাহা শুনিয়া চন্দ্র বলিলেন, “বৎস পিপ্পলাদ! বল, বুদ্ধি, বিদ্যা, ধন, রূপ, গুণ, সুখ, মান, যশ, পুণ্য সকলই আমি তোমাকে দিতেছি, তুমি গ্রহণ কর।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার পিতাকে যাহারা মারিয়াছে, তাহাদিগকে যদি না মারিতে পারিলাম, তবে এ সব লইয়া আমার কি হইবে? আগে বলুন, কোথায়, কোন দেশে, কোন তীর্থে গিয়া, কি মন্ত্র বলিয়া, কোন দেবতাকে ডাকিয়া আমি এ কাজ করিতে পারিব?”

 চন্দ্র বলিলেন, “শিবকে ডাক, তোমার কাজ হইবে।”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমি যে ছেলেমানুষ, আমি তো কিছুই জানি শুনি না আমি কেমন করিয়া তাঁহাকে ডাকিব?”

 চন্দ্র বলিলেন, “তুমি চক্রেশ্বর তীর্থে গিয়া ভক্তিভরে তাঁহার কথা ভাব, আর তাঁহাকে ডাক, তবেই তিনি আসিবেন।”

 পিপ্পলাদ তখনই সেই তীর্থে গিয়া প্রাণপণে শিবকে ডাকিতে লাগিল সেই ডাকে শিব তাহার সম্মুখে আসিয়া বলিলেন, “পিপ্পলাদ, কি চাহ?”

 পিপ্পলাদ বলিল, “আমার দেবতুল্য ধার্মিক পিতামাতাকে যাহারা মারিয়াছে, আমি তাহাদিগকে মারিতে পারি, এমন ক্ষমতা আমাকে দিন।”

 শিব কহিলেন, “আচ্ছা, তুমি যদি আমার তিনটা চোখই দেখিতে পার, তাহা হইলে দেবতাদিগকে মারিতে পারিবে।”