পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮৪
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

 কিন্তু পিপ্পলাদ অনেক চেষ্টা করিয়াও তাঁহার দুইটা বৈ চোখ দেখিতে পাইল না।

 তখন শিব বলিলেন, “আর কিছুদিন তপস্যা কর, দেখিতে পাইবে।”

 এ কথায় পিপ্পলাদ এমনি ভয়ংকর তপস্যা আরম্ভ করিল যে, অল্পদিনের ভিতরেই সে দেখিল, শিবের কপালে আর একটি চোখ আছে। তখন শিবের সেই চোখ হইতে আগুনের ঘোড়ার মতন একটা ভয়ংকর ‘কৃত্যা’ (ভূত) বাহির হইয়া ঘোরতর শব্দে পিপ্পলাদকে বলিল, “কি করিব?”

 পিপ্পলাদ বলিল, “দেবতাদিগকে ধরিয়া খাও!”

 বলিতে বলিতেই সেটা খপ্‌ করিয়া পিপ্পলাদকে ধরিয়া মুখে দিতে গিয়াছে!

 পিলাদ ভয়ানক থতমত খাইয়া চ্যাঁচাইয়া বলিল, “আরে, আরে, ও কি কর?”

 সেটা বলিল,“দেবতাদিগকে খাইতে হইলে, তাহারা যে তোমার শরীর গড়িয়াছে তাহাও খাইব।”

 একথায় পিপ্পলাদ আবার শিবের স্তব করিলে, শিব সেই ভয়ংকর জিনিসটাকে বলিলেন, “এ স্থানের এক যোজনের মধ্যে তুমি কাহাকেও খাইতে পারিবে না!” তখন সেই ভূতটা সেখান হইতে দূরে গিয়া এমনই সর্বনেশে আগুন জ্বালাইয়া বসিল যে, আর একটু হইলেই সে দেবতার দলকে পোড়াইয়া শেষ করিত! দেবতারা প্রাণের ভয়ে কাঁপিতে কাঁপিতে শিবের নিকট আসিয়া বলিলেন, “রক্ষা করুন প্রভু! আপনার ভূত আমাদিগকে পোড়াইয়া মারিল। আপনি রক্ষা না করিলে এ যাত্রা আর আমাদের উপায় নাই।”

 শিব তাঁহাদিগকে বলিলেন, “তোমরা এইখানে আসিয়া বাস কর। এখানে ওটা তোমাদের কিছু করিতে পারিবে না।”

 দেবতারা বলিলেন, “স্বর্গ আমাদের বাসস্থান, তাহা ছাড়িয়া এখানে কি করিয়া থাকি?”

 শিব কহিলেন, “তবে এক কাজ কর;সূর্যই হইতেছেন এই সংসারের পিতা। তিনি আসিয়া এখানে বাস করুন, তাহাতেই সকল দেবতার বাস করা হইবে।” এইরূপে তখনকার মতো বিপদ কাটিয়া গেল।

 তারপর শিবের উপদেশে পিপ্পলাদের রাগও দূর হইল। তখন শিব অনেকবার পিপ্পলাদকে বর লইতে বলিলেন। পিপ্পলাদ এমন সব বর প্রার্থনা করিল, যাহাতে জগতের উপকার হয়। নিজের জন্য সে কিছুই চাহিল না।

 ইহাতে দেবতাগণ যারপরনাই তুষ্ট হইয়া তাহাকে বলিলেন, “বাছা, তুমি তো তোমার নিজের জন্য কিছুই চাহিলে না। আমরা তোমাকে বর দিব, তুমি তোমার নিজের জন্য কিছু চাহিয়া লও।”

 তখন পিপ্পলাদ জোড়হাতে দেবতাদিগকে নমস্কার করিয়া বলিল, “আমার পিতামাতার পবিত্র নাম কানে শুনিয়াছি মাত্র, তাঁহাদিগকে দেখিবার সুখ এই অভাগার ভাগ্যে ঘটে নাই, ইহাতে আমার মন বড় অস্থির থাকে।”

 দেবতারা বলিলেন, “সেজন্য তুমি কিছুমাত্র দুঃখিত হইয়ো না, এখনই তোমার পিতামাতাকে দেখিতে পাইবে।”

 এ কথা শেষ হইতে না হইতেই পিপ্পলাদের পিতামাতা দিব্য কেশ পরিয়া, সোনার রথে চড়িয়া স্বর্গ হইতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন। পিপ্পলাদ অমনি তাঁহাদের পায়ে লুটাইয়া