পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

সেখানে মহর্ষি গৌতমের আশ্রম ছিল। গৌতম যারপরনাই রাগিয়া তাহাদিগকে বলিলেন, “সে হইবে না, এই পাপীকে এখানে স্নান করাইলে আমি তোমাদিগকে শাপ দিয়া ভস্ম করিব! তোমরা শীঘ্র এখান হইতে যাও।”

 এ কথায় দেবতারা নর্মদার জলে ইন্দ্রকে স্নান করাইতে গেলেন। সেখানে মাণ্ডব্য মুনির আশ্রম ছিল। মাণ্ডব্য মুনি বিষম ভূকুটির সহিত তাঁহাদিগকে বলিলেন, “এখানে যদি ইঁহাকে স্নান করাও তবে এখনি তোমাদের শাপ দিয়া ভস্ম করিব।”

 যাহা হউক, শেষে দেবতারা অনেক স্তুতি মিনতি করায় মাণ্ডব্য ইন্দ্রকে সেখানে স্নান করাইতে দিলেন। তারপর তাঁহাকে গৌতমীতে নিয়ে গিয়াও স্নান করান হইল। ইহার পর আবার ব্রহ্মা তাঁহার কমণ্ডলুর জল দিয়া ইন্দ্রকে ধুইলেন, তবে সে যাত্রার মতো তিনি একটু নিশ্চিন্ত হইলেন।

 বাস্তবিক, ইন্দ্র হওয়া আগাগোড়াই সুখের কথা ছিল না। কিন্তু, লোকে ভাবিত ইন্দ্র বড় সুখী। তাই অনেকে ইন্দ্র হইবার জন্য কঠোর তপস্যা করিত। সেজন্য কাহাকেও খুব তপস্যা করিতে দেখিলেই ইন্দ্র ভাবিতেন সর্বনাশ! এইবার বুঝি বা আমার কাজটি যায়!’ তখন তিনি লোকটির তপস্যা ভাঙ্গিয়া দিবার জন্য প্রাণপণে চেষ্টা করিতেন। কিন্তু, তাহা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে এক এক জন লোক ইন্দ্র হইয়া যাইত!

 নহুষ নামে এক রাজা একবার ইন্দ্র হইয়া কি হুলস্থুলই বাধাইয়া ছিলেন! উচ্চৈঃশ্রবা ঐরাবতে তাঁহার মন উঠিল না, তিনি বলিলেন, “আমি বড়-বড় মুনিদের ঘাড়ে চড়িয়া বেড়াইব!”

 অমনি এক আশ্চর্য পালকি প্রস্তুত হইল, মুনিরা হইলেন তাহার বেহারা। নহুষ তাহাতে উঠিয়া বসিয়া মুনিঠাকুরদের উপরে অসম্ভব তম্বি জুড়িয়া দিলেন। সে বেচারদের গায়ে জোর কম। ফলমূল খাইয়া থাকেন, পালকি বহার অভ্যাস কাহারও নাই, তাঁহাদের কাজে নহুষের মন উঠিবে কেন? নহুষ তখন বেজায় চটিয়া মহর্ষি অগস্ত্যের মাথায় ধাঁই শব্দে এক প্রচণ্ড লাথি লাগাইয়া দিলেন। তার ফলও পাইলেন হাতে হাতেই কেননা, তাহার পরমুহূর্তেই মুনির শাপে তাঁহার সেই সুখের ইন্দ্রগিরি ঘুচিয়া গেল, আর তিনি এক প্রকাণ্ড সাপ হইয়া হিমালয়ের নিকটে পড়িয়া গড়াগড়ি যাইতে লাগিলেন!

 আর একবার অসুরদের সঙ্গে দেবতাদের ভীষণ যুদ্ধ চলিয়াছে, কিন্তু কেহই জয়লাভ করিতে পারিতেছে না। সেই সময়ে পৃথিবীতে রজি নামে একজন অতিশয় ক্ষমতাশালী রাজা ছিলেন। দুই দলই ভাবিলেন, “এই রজিকে আনিয়া আমাদের সঙ্গে জুটাইতে পারিলে নিশ্চয় আমরা জিতিব।”

 এই ভাবিয়া দেবতারা রজিকে আসিয়া বলিলেন, “হে রাজন, তুমি আমাদের সঙ্গে মিলিয়া অসুর বধ কর, নহিলে আমরা কিছুতেই তাহাদের সঙ্গে পারিয়া উঠিতেছি না।” রজি বলিলেন, “আপনারা যদি আমাকে ইন্দ্র করেন, তবে আমি আপনাদের সঙ্গে মিলিতে পারি।”

 দেবতারা বলিলেন, “অবশ্য তোমাকে আমরা ইন্দ্র করিব, তুমি শীঘ্র আইস!”

 এই বলিয়া দেবতারা সবে চলিয়া গিয়াছেন, অমনি অসুরেরা আসিয়া রজিকে বলিল, “মহারাজ, আপনি আমাদের পক্ষ হইয়া যুদ্ধ করুন।”