পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৬৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পুরাণের গল্প
৬৮৯

রজি দেবতাদিগকে যেমন বলিয়াছিলেন, তেমনি অসুরদিগকেও বলিলেন, “আপনারা যদি আমাকে ইন্দ্র করেন, তবে আমি আপনাদের কথায় রাজি আছি!”

 কিন্তু, অসুরেরা সে কথায় অতিশয় ঘৃণার সহিত বলিল, “এমন সাহায্যের আমাদের প্রয়োজন নাই। আমাদের ইন্দ্র প্রহ্লাদ আর কোনো ইন্দ্র আমরা চাই না। আপনি না হয় আমাদের পক্ষে নাই আসিলেন।”

 তখন রজি দেবতাদের সঙ্গে জুটিয়া ভয়ানক রাগের সহিত অসুর মারিতে আরম্ভ করিলেন, আর তাহাতে অতি অল্পদিনের মধ্যেই দেবতাদের জয়লাভ হইল। ইন্দ্র দেখিলেন, এখন তো বড়ই বিপদ উপস্থিত, রজিকে এখন সিংহাসন ছাড়িয়া দিতে হইবে। তাই তিনি রজি নিজে কিছু বলিবার আগেই তাঁহাকে বলিলেন, “মহারাজ! লোকে বলে, যে ভয় হইতে রক্ষা করে, সে পিতা। আপনি আমাকে ভয় হইতে উদ্ধার করিয়াছেন, কাজেই আপনি আমার পিতা হইলেন। আর তাহাতেই আপনি ইন্দ্রও হইলেন, কেননা ইন্দ্রের পিতা হইলে আর ইন্দ্র হওয়ার চেয়ে বেশি বৈ কম কি হইল?”

 রজিও ইন্দ্রের সেই ফাঁকিতে ভুলিয়া আহ্লাদের সহিত দেশে ফিরিয়া আসিলেন, স্বর্গে রাজা হওয়ার কথা আর মুখে আনিলেন না।

 এই রজির পাঁচশত মহাবীর পুত্র ছিল। রজির মৃত্যুর পরে এই পাঁচশত বীর মিলিয়া যুক্তি করিল, “দেবতারা ফাঁকি দিয়া আমাদের পিতাকে ইন্দ্রপদ হইতে বঞ্চিত করিয়াছিল, আইস, আমরা তাহার শোধ লইব!”

 এই বলিয়া তাহারা দেবতাদিগের সহিত ঘঘারতর যুদ্ধ আরম্ভ করিল, আর দেখিতে দেখিতে দলবল সহিত ইন্দ্রকে তাড়াইয়া দিয়া স্বর্গ আর পৃথিবী দুইই দখল করিয়া বসিল।

 এই পাঁচশত ভাই যেমন বীর, তেমনি যদি বুদ্ধিমান হইত তবে আর ইন্দ্রের নিজ রাজ্য ফিরিয়া পাইবার কোনো উপায়ই থাকিত না। কিন্তু ইহারা বুদ্ধিমানের মতন ধর্মপথে থাকিয়া রাজ্যপালন করার বদলে, নানারূপ অসৎ কার্যে নিজেদের বিষয় ও বল নষ্ট করিয়া ফেলিল। তাহার ফলে, অল্পদিনের ভিতরেই ইন্দ্র তাহাদিগকে আড়াইয়া আবার আসিয়া স্বর্গের রাজা হইলেন।

 ইন্দ্র হওয়ার যে কি সুখ, তাহার সম্বন্ধে আর একটা মজার গল্প আছে। একবার অসুরেরা ঘোরতর যুদ্ধে দেবতাদিগকে যারপরনাই ব্যস্ত করিয়া তুলিলে, তাঁহারা সূর্যবংশের রাজা পরঞ্জয়কে আসিয়া বলিলেন, “মহারাজ, তুমি আমাদের হইয়া অসুরদের সঙ্গে যুদ্ধ কর।”

 পরঞ্জয় কহিলেন, “আমি যুদ্ধ করিতে প্রস্তুত আছি যদি আপনারা আমার একটি কথায় রাজি হন। আপনাদের যিনি ইন্দ্র, আমি তাঁহার কাঁধে চড়িয়া যুদ্ধ করিব।”

 এ কথায় ইন্দ্র আর অন্য দেবতারা সকলেই বলিলেন, “হাঁ হাঁ, তাহাই হইবে, তুমি আইস!”

 তারপর আবার যুদ্ধ আরম্ভ হইলে, ইন্দ্র বিশাল এক ষাঁড় সাজিয়া পরঞ্জয়কে কাঁধে করিয়া লইলেন, পরঞ্জয়ও তাহাতে ভারি খুশি হইয়া দুই দণ্ডের মধ্যে অসুর মারিয়া শেষ করিলেন। সেই ষাঁড়ের ‘ককুদ্‌’ অথবা কাঁধে চড়িয়া যুদ্ধ করায় তখন হইতে পরঞ্জয়ের নাম হইল ‘ককুৎস্থ’। দশরথের পুত্র রাম এই ককুৎস্থ বংশের লোক ছিলেন বলিয়া, তাঁহাকেও অনেক সময়ে বলা হয় ‘কাকুৎস্থ’।

উপেন্দ্র—৮৭