পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পুরাণের গল্প
৭১১

আগে যেতে লাগলেন, বাজনদারেরা মাথা দুলিয়ে নাচতে নাচতে তাদের সঙ্গে সঙ্গে বাজিয়ে চলল।

 এদিকে হিমালয়ও চুপ করে বসে থাকেন নি। পার্বতীকে নাইয়ে, সাজিয়ে তাঁরাও প্রস্তুত হয়ে আছেন। বাড়ি ঘর সাজিয়ে, তোরণ বানিয়ে, নিশান উড়িয়ে, স্বপ্নপুরীর মতো সুন্দর করা হয়েছে। পর্বতেরা সকলে সেজেগুজে সপরিবারে এসে কাজকর্মে ব্যস্ত রয়েছেন। শিবকে এগিয়ে আনবার জন্য স্বয়ং গন্ধমাদন পর্বত কখন বেরিয়ে গেছেন। বর এলে তাকে আদর করে আনতে হবে, সেজন্য নিজে হিমালয় ফটকে দাঁড়িয়ে।

 বাড়ির ভিতরেও অবশ্যি কেউ চুপ করে নাই। মেয়েদের আজ বড়ই আনন্দ আর উৎসাহ। পার্বতীর মা মেনকাদেবী তো আনন্দে মাথা ঠিকই রাখতে পাচ্ছেন না। তিনি এরই মধ্যে নারদ মুনিকে সঙ্গে করে গিয়ে ছাতে উঠে আছেন—যার জন্যে মেয়ে এত তপস্যা করলেন, সেই শিবকে সকলের আগে দেখতে হবে। সাধারণ দেবতারাই যখন দেখতে এত সুন্দর, শিব না জানি তবে কত সুন্দর।

 এমন সময় গন্ধর্বের রাজা বিশ্বাবসু এলেন। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর, তাঁকে দেখে মেনকা বললেন, “এই বুঝি শিব!” নারদ তাতে হেসে বললেন, “না, না—ও তো আমাদের বাজনদার, ও কেন শিব হবে? তা শুনে মেনকা তো থতমত খেয়ে চুপ করে গেলেন, ভাবলেন, ‘বাজনদারই দেখতে এমন, শিব না জানি তবে কেমন!’

 তারপর এলেন যক্ষদের নিয়ে কুবের; তিনি গন্ধর্বের রাজার চেয়ে দ্বিগুণ সুন্দর। মেনকা বললেন, “তবে এই শিব!” নারদ বললেন, “না!” শুনে মেনকা আরো আশ্চর্য হলেন।

 তারপর এলেন বরুণ, তিনি কুবেরের চেয়ে দ্বিগুণ সুন্দর; তারপর এলেন যম, তিনি বরুণের চেয়ে দ্বিগুণ সুন্দর; তারপর এলেন ইন্দ্র, তিনি যমের চেয়েও দ্বিগুণ সুন্দর। মেনকা এঁদের একেকজনকে দেখে ভারি খুশি হয়ে বললেন, “এ নিশ্চয় শিব!” নারদ তাতে না বললেন, তিনি অপ্রস্তুত হয়ে মাথা চুলকাতে লাগলেন।

 এমনি করে সূর্য, চন্দ্র, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, বৃহস্পতি সকলকে দেখেই মেনকা বললেন, “এই শিব!” যখন শুনলেন যে এঁদের কেউ শিব নন, শিব এঁদের চেয়েও বড়, তখন তাঁর এতই আশ্চর্য বোধ হল যে, তিনি আর ভাবতেই পারলেন না, সেই শিব তবে কত সুন্দর।

 এমন সময় ভূত প্রেত ব্রহ্মদৈত্যি সব নিয়ে শিব এসে উপস্থিত। এত ভূত আর মেনকা কখনো একসঙ্গে দেখেন নি; তাদের সেই বিকট ভেঙ্‌চি দেখেই তাঁর মাথা ঘুরে গেল। তাদের সঙ্গে যে আবার পাঁচমুখো একটা কে ষাঁড়ে চড়ে এসেছে—মাথায় জটা, পরনে বাঘছাল, গায়ে ছাই মাখা, গলায় মড়ার মাথা—সে কথার খবর নিবার খেয়ালই তাঁর রইল না। তখন নারদ সেই দেবতাকে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বললেন—“এই শিব!”

 যেই এই কথা বলা, অমনি মেনকা, “ও লক্ষ্মীছাড়া পোড়ারমুখী পার্বতী! করেছিস কি!” বলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন।

 শিব সে কথা জানতে পেরে ছুটে এসে মেনকার মাথায় জল ঢেলে অনেক হাওয়া করতে শেষে তাঁর জ্ঞান হল।

 তখন যে তিনি শিবকে আর নারদকে বকুনিটা বকলেন! নারদের অপরাধ ছিল এই যে তিনি বলেছিলেন, “শিব বড় ভালো, তাঁর সঙ্গে পার্বতীর বিয়ে হবে।” বকতে বকতে তাঁর