পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭৫৮
উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র

তালগাছপানা হাতে কষে দিল চড়।
হনু তারে এক কিল দিল বাম হাতে,
পড়িল রাক্ষসী মুখ সিঁটকায়ে তাতে।
তখন খুঁজিয়া হনু ফেরে ঘরে-ঘরে,
কত মাঠে, কত পথে, রথের উপরে।
মন্দিরে-মন্দিরে খোঁজে, ঘাটে আঙিনায়,
কোথাও সীতায় নাহি দেখিবারে পায়।
হনু বলে, “হায়-হায়! বুঝিনু এখন,
নিশ্চয় খেয়েছে তাঁরে অভাগা রাবণ।”
কত সে কাঁদিল, ভাবি এই কথা মনে
তারপরে এল এক অশোকের বনে।
সেই বনে গিয়া হনু দেখিল সীতায়,
কেবলই কাঁদেন তিনি পড়িয়া ধূলায়
ময়লা কাপড় তাঁর, আলুথালু চুল,
রাক্ষসে ঘিরেছে তাঁরে লয়ে শেল শূল।
হনু বলে, “এই সীতা, চিনিনু এখন,
ইহারেই সেইদিন আনিল রাবণ।”
বিকট রাক্ষসী হনু দেখিল সেথায়
ভালুকের মতো বোঁযা তাহাদের গায়
বাঘমুখী কেউ, কারু গোদ বড় ভাবি,
কারু শিঙ, কারু শুঁড়, কেউ নাড়ে দাড়ি
কাক নেই মাথা, আর কেহ এক পেয়ে,
উটপানা, বকপালা আছে কত মেয়ে।
সীতারে ঘিরিয়া তারা খিঁচাইছে দাঁত
কিল দেখাইছে, তুলি এই বড় হাত।
রাবণ সীতারে আসি কত কথা কয়,
রাঁধিয়া খাইবে বলি দেখায় সে ভয়।
ছিঁড়িয়া খাইতে চাষ রাক্ষসীরা তাঁরে,
কুড়াল তুলিয়া তাঁরে যায় মারিবারে।
সীতা কন, “তাই হোক ওরে বাছাগণ,
মরিলে তো যাই বেঁচে, মার এইক্ষণ।”

গাছে বসে হনুমান দেখিছে সকল,
কেমনে কহিবে কথা ভাবিছে কেবল।
এমন সময় সীতা এলেন সেখানে,
কত সুখ হল তাঁর পেয়ে হনুমানে