পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭৬৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ছোট রামায়ণ
৭৬৭

রথ ঘোড়া সব তার গেল তাঁর বাণে,
সারথি মরিল, নিজে মরে বুঝি প্রাণে৷
মুকুট গিয়েছে উড়ে, মাথা যায়-যায়,
অবশ হয়েছে হাত, বল নাই গায়৷
হাসিয়া তখন তারে কহিলেন রাম,
“আজি তবে ঘরে গিয়া করহ বিশ্রাম৷”
লাজে আর রাবণের কথা নাহি সরে,
হেঁট করে কালামুখ পলাইল ঘরে৷
বসিয়া সভার মাঝে বলিছে রাবণ,
“উপায় কি হবে, সবে কহ তো এখন৷
মানুষেরে ধরে খাই, নাহি করি ডর,
কে জানে সে বেটা হয় এত ভয়ংকর?
হায় আমি তার কাছে গেলাম হারিয়া!
কোন বীর দিবে এই মানুষ মারিয়া?
শীঘ্র গিয়া কুম্ভকর্ণে জাগাও এখন,
মানুষ মারিবে সেই যদি করে মন৷”
কুম্ভকর্ণ ভাই হয় রাবণ রাজার,
ছুটিয়া পলায় যম দেখা পেলে তার!
এমন বিকট জন্তু দেখে নাই কেহ,
পাহাড়ের মতো তার ভয়ংকর দেহ৷
ব্রহ্মা দিল বর, ‘শুধু ঘুমাইবে’ বলে
নহিলে গিলিয়া বেটা খাইত সকলে৷
ছয় মাস ঘুমাইয়া জাগে একদিন,
হাজারে-হাজারে খায় মহিষ হরিণ৷
ঘরের ভিতরে তার নাহি হয় ঠাঁই,
পর্বত গুহায় গিয়া ঘুমায় সে তাই৷
ঝড়ের মতন শ্বাস বয় নাক দিয়া,
যে যায় নিকটে, তারে নেয় উড়াইয়া৷
তারে জাগাইতে সবে গেল তাড়াতাড়ি,
ফুঁকিল কানের কাছে শাঁখ ভারী-ভারী৷
তালি দিয়া চটপট্ চেঁচাইল কত,
কষে নাড়া দিল গায়, যে পারিল যত৷
এত করি তবু তারে নারি জাগাইতে,
সকলে মিলিয়া তারে লাগিল মারিতে।
কষে মারে কিল-গুঁতা যত মতো হয়,
চিমটি কাটে যে কত, বলিবার নয়৷