পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/৭৮৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কবিতা ও গান
৭৮৫

নাপিত বললে, “ওরে বাঘ! তুই যে ভারি বোকা!
ভরবে না পেট এখন খেলে, দেখছিস্‌ আমি রোগা।
ধান হলে ভাত খেয়ে হব মোটা তাজা;
তখন বরং আমায় খেয়ে দিস্ রে ব্যাটা সাজা।”
বাঘ ভাবলে ভালই কথা, “ধান হবে কবে?”
“তোমরা এসে লাঙ্গল টান, জলদি হবে তবে।”
বুড়া বাঘ বন থেকে আরেক বাঘ এনে,
চাষ করে দিল ক্ষেত, লাঙ্গল টেনে টেনে।
তারপরে হল ধান; বাঘেরা সব মিলে
ধানের বোঝা বয়ে নিয়ে ঘরে পৌছে দিলে।
ঘরের দুয়ার বন্ধ করে বললে নাপিত আস্তে,
“ল্যাজে বেঁধে ফুটো দিয়ে, দাও ত বাঘ, কাস্তে।’
বুড়া বাঘ লেজ বাড়িয়ে কাস্তে যেই দিল,
অমনি নাপিত কুচ করে লেজটি কেটে নিল।
বেজায় রেগে বাঘের পাল বলে, “ওরে দুষ্ট!
বাগে পেলেই করব তোরে ভাত খাইয়ে পুষ্ট!”
বনে গেলে বাঘের পাল, নাপিত বলে হেসে—
“আমি হচ্ছি বাঘের চাঁই, নইকো আমি যে সে।”

(৩)



জামালপুরের বাজার থেকে ফিরছে নাপিত একা,
ঘিরল তারে বাঘের পালে লাগল ভেবা-চাকা!
তালের গাছ ছিল সেথা চন্দনা তীরে,
উঠল নাপিত সেই গাছে, বাঘ বলল, “কি রে,
গাছে উঠেই পার পাবি? একের পিঠে অন্যে
উঠে আজকে ধরব তোরে, এসেছি স-সৈন্যে।”
বাঘের উপর উঠছে বাঘ, বুড়া রইল নীচে,
নাপিত দেখলে এখন আর ভাবা-চিন্তে মিছে।
ক্ষুর দিয়ে তালের কাঁদি কেটে নিয়ে ধীরে
বললে, “আজ বাঘের মবণ ভরা গাঙ্গের তীরে।
ব্রহ্ম তাল, বিষ্ণু তাল, আব তাল হেঁড়ে,
পড় গিয়ে বাঘের ঘাড়ে, নীচে আছে বেঁডে!"
লেজকাটা ভাবল মনে আমায় মাল্লে আগে,
অমনি কিনা বুড়ো বাঘ জলদি করে ভাগে।
টপাটপ পড়ল বাঘ, মরল আছাড় খেয়ে,
বেঁড়ে পড়ল হোঁচট খেয়ে, নাপিত চলল ধেয়ে।